নেপালে সহিংসতায় ওলির পতন, অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন ভারত
Mithu Murad | প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২২

নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি। সহিংসতায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক অস্থিরতার ধারাবাহিকতায় এবার নেপাল সরকার পতনের মুখে পড়ল।
বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুর পার্লামেন্ট ভবনে হামলা চালায় এবং কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরিস্থিতি অনেকের কাছে গত বছরের বাংলাদেশ সংকট এবং ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কার অভ্যুত্থানের দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
ভারতের উদ্বেগ
ভারতের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে, যার প্রভাব সরাসরি উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গে পড়ে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “নেপালের সহিংসতা হৃদয়বিদারক। তরুণদের প্রাণহানিতে আমি মর্মাহত। নেপালের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।”
ভারত ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার মতো হঠাৎ সংকটে দিল্লি এবারও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ওলির দিল্লি সফরের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তার পদত্যাগ বিষয়টিকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করেছে।
কৌশলগত গুরুত্ব
নেপালের অস্থিরতা ভারতের অভ্যন্তরেও প্রভাব ফেলছে। প্রায় ৩৫ লাখ নেপালি ভারতে কাজ ও বসবাস করেন, ভিসা ছাড়াই দুই দেশের নাগরিকদের যাতায়াত সম্ভব। পাশাপাশি প্রায় ৩২ হাজার গুর্খা সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও কাঠমান্ডু ভারতের ওপর নির্ভরশীল। বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৮.৫ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে তেল ও খাদ্যপণ্যের বড় অংশ ভারত থেকেই আমদানি হয়।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
বিক্ষোভকারীরা নেপালের তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ প্রকাশ করছে। ফলে কে ওলির উত্তরসূরী হিসেবে ক্ষমতায় আসবেন তা এখনও অনিশ্চিত। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের এখন কূটনৈতিকভাবে সতর্ক থাকতে হবে এবং নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতির অস্থিরতা ভারতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে, বাংলাদেশের সঙ্গে টানাপোড়েন, মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলমান—এসব পরিস্থিতির মধ্যে নেপালের সংকট দিল্লিকে আরও চাপে ফেলেছে।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতা মন্তব্য করেছেন, “ভারত তার বৃহৎ শক্তি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আগে নিজের প্রতিবেশে স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।