৫৬ বছর বয়সে এইচএসসি পাশ শাম্মী আক্তারের
খুলনা প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ১৩:৪৪
অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিবারের অনুপ্রেরণায় ৫৬ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.১৮ পেয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন খুলনার শাম্মী আক্তার। তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে খুলনার মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে এই বছর পরীক্ষায় অংশ নেন।
শাম্মী আক্তার জানিয়েছেন, তার সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো নিজের মনোবল, স্বামী ও সন্তানের উৎসাহ এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি। ১৯৮৮ সালে দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন বিবাহের কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। সংসার, সন্তান ও দায়িত্বের মাঝেও শিক্ষার স্বপ্ন কখনো ম্লান হয়নি তার।
২০১৯ সালে ছেলে ও স্বামীর উৎসাহে আবারও পড়াশোনার আগ্রহ জাগে। খুলনার ইকবাল নগর বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও কোর্স বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং বদলি প্রতিষ্ঠান থেকেও ভর্তি বাতিলের খবর পাওয়ায় তিনি এক পর্যায়ে ভেঙে পড়েন। তবে ২০২১ সালে এক শিক্ষকের খুদে বার্তায় নতুনভাবে শুরু হয় তার আশা। স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করেন।
২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর তিনি উদ্যোক্তা হিসেবে বেকারত্ব দূর করার উদ্যোগ নেন এবং পরিবারের সঙ্গে খুলনার করিমনগরে একটি ছোট ব্যবসা শুরু করেন।
শাম্মী আক্তার বলেন, “প্রতিদিনের পরিশ্রম ও ধৈর্যই আমাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সব কাজ শেষে রাত ১১টার পর পড়তে বসতাম। প্রাইভেট শিক্ষক ছিল না, অনেক সময় ইংরেজি ইউটিউব দেখে শিখেছি। কখন যে রাত ১টা বা ৩টা বাজে যেত, টেরই পাইনি।”
তিনি আরও বলেন, “এই বয়সে এসে অনেকে পারবে কিনা জানি না, কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমি পেরেছি। বয়স শুধু সংখ্যা মাত্র। এবার অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাব।”
শাম্মীর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট হাফিজুর রহমান মোল্লা বলেন, “আমি সবসময় পাশে থেকেছি। বলেছি ভালো ফলাফল নয়, পাস করলেই হবে। এতে সমাজের জন্যও কিছু করা সম্ভব।”
শাম্মীর বড় ছেলে মামুনুর রশীদ বলেন, “আমি পৃথিবীর কম সংখ্যক সন্তানদের মধ্যে একজন যে তার মায়ের সাফল্যে এত আনন্দিত। এটি আমাদের স্বপ্নের বহিঃপ্রকাশ।”
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।