চট্টগ্রামে বিএনপি প্রার্থীর জনসংযোগে গুলি, নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৪
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি | | প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৯
চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগ কর্মসূচিতে সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন প্রার্থী এরশাদ উল্লাহসহ আরও চারজন।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন চালিতাতলী পূর্ব মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ সরওয়ার হোসেন বাবলা। তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের নেতৃত্বাধীন প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় সরওয়ার হোসেন বাবলা নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইরফানুল হক শান্ত, আমিনুল ও মর্তুজা হকসহ আরও তিনজন।
গুলিবিদ্ধ এরশাদ উল্লাহকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর পায়ে গুলি লেগেছে বলে জানিয়েছেন বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মো. জসিম উদ্দিন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আমিরুল ইসলাম বলেন,
“গুলিবিদ্ধ বাবলা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। হামলাকারীদের শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ চলছে।”
স্থানীয়রা জানায়, মাগরিবের নামাজ শেষে চালিতাতলী পূর্ব মসজিদ থেকে বেরিয়ে জনসংযোগে অংশ নেন এরশাদ উল্লাহ। এ সময় হঠাৎ এক যুবক ভিড়ের মধ্যে ঢুকে সরওয়ারের ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি চালায়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, টানা সাত-আটটি গুলি ছোড়া হয়।
এই হামলার জন্য জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের দায়ী করেছেন বিএনপির একাধিক নেতা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমান বলেন,
“এটি জামায়াত-শিবিরের পরিকল্পিত হামলা। ধানের শীষের প্রার্থীকে টার্গেট করেই এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন,
“বাবলা বিএনপির কেউ নন। স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে চায়, কিন্তু আমরা রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
ঘটনার পরপরই নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি নাসিমন ভবনে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিল শেষে নেতারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সহিংস ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিরাপত্তা বাহিনীকে দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানায়,
“প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এরশাদ উল্লাহ এই হামলার মূল টার্গেট ছিলেন না; বিক্ষিপ্তভাবে ছোড়া একটি গুলি তাঁর শরীরে লাগে। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
সরকার সকল প্রার্থী ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,
“নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের হামলা ঘটানো হয়েছে। এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”
তিনি দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন,
“আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। গণসংযোগকালে হামলার ঘটনা নির্বাচনী ষড়যন্ত্র হতে পারে।”
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন,
“দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক, তবে কেউ যেন এ ঘটনার সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক ফাউল গেম না খেলে।”
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন,
“বাবলা এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তাঁকে লক্ষ্য করেই প্রতিপক্ষ দুর্বৃত্তরা গুলি চালায়। এরশাদ উল্লাহর আহত হওয়া দুঃখজনক।”
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ জানান,
“এরশাদ উল্লাহ টার্গেট ছিলেন না, সরওয়ার বাবলাই মূল লক্ষ্য ছিল। নিহত বাবলার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল।”
তিনি বলেন,
“নির্বাচনের আগে এমন ঘটনা অপ্রত্যাশিত। যেন এমন আর না ঘটে, সে বিষয়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।