বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২

জনবহুল এলাকায় তেলের ডিপো: ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কা

মিঠু মুরাদ | প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৪০

জনবহুল এলাকায় অবস্থিত এ ডিপো | ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌর শহরের থানাপাড়া এলাকায় মেসার্স রাহিম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি তেলের ডিপো ঘিরে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জনবহুল এলাকায় অবস্থিত এ ডিপোটি লাইসেন্সের শর্তাবলি উপেক্ষা করে পরিচালিত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি রংপুরের সিও বাজারে এলপিজি পাম্প বিস্ফোরণের ঘটনায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার পর সচেতন মহল মনে করছে, জনবহুল এলাকায় এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থাকা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা বলেন, “এ ধরনের প্রতিষ্ঠান মানুষের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। জনবহুল এলাকায় এগুলো থাকা ঠিক নয়।”

ডিপোর অবস্থান ও ঝুঁকি
সরজমিনে দেখা যায়, রাহিম এন্টারপ্রাইজের চারপাশে রয়েছে ৫১ বিজিবির পাটগ্রাম সদর দপ্তর, পাটগ্রাম থানা, রসুলপীর জামে মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য বসতবাড়ি। এমন স্পর্শকাতর এলাকায় তেলের ডিপো থাকার কারণে যেকোনো দুর্ঘটনায় ভয়াবহ প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক রাহিমুল হক মজুমদার জানান, তিনি নিয়ম মেনেই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে, সাংবাদিকরা মাটির নিচে স্থাপিত গোপন ট্যাংকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সুকৌশলে তা এড়িয়ে যান।

লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘন
বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত পেট্রোলিয়াম লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী, ডিপোর চারদিকে কমপক্ষে ৭ থেকে ১১ মিটার ফাঁকা জায়গা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাহিম এন্টারপ্রাইজের চারপাশে নিয়ম মানা হয়নি। বরং ডিপোটি ঘরবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে লাগোয়া অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে, যা গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ডিপোর মালিক মাটির নিচে গোপনে ট্যাংকি বসিয়ে তেল মজুদ করছেন, যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

প্রশাসনের অবস্থান
রংপুরের সহকারী বিস্ফোরক পরিদর্শক অশোক কুমার দাস বলেন, “রেকর্ড অনুযায়ী মেসার্স রাহিম এন্টারপ্রাইজ বৈধ লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান। তবে শর্ত মানা হচ্ছে কিনা তা তদন্ত করা হবে। শর্ত লঙ্ঘনের প্রমাণ মিললে লাইসেন্স বাতিল, জরিমানা কিংবা মামলা পর্যন্ত করা হতে পারে।”
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস বলেন, “কেউ যদি শর্ত ভঙ্গ করে ব্যবসা চালায়, অভিযোগ পেলেই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এলাকাবাসীর দাবি
স্থানীয়রা জানান, “এটি যেন একটি ভ্রাম্যমাণ বোমা। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা প্রতিদিন আতঙ্কে থাকি। কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে এই ডিপো বন্ধ করে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্যথায় আমরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top