দৃষ্টি ফেরাতে চোখ দান করতে চান মা নাজমা বেগম
সাবিকুন নাহার সাদিয়া | প্রকাশিত: ২ আগষ্ট ২০২৫, ১৮:৩১

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন, জুলাই বিপ্লবের মিছিলে ঢাকার উত্তরায় পুলিশের গুলিতে দুটি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে ঘরবন্দী বিছানা বন্ধী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন মোঃ মুবিন মাল। শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সিধলকুড়া ইউনিয়নের বড় সিধুলকুড়া গ্রামের মৃত মোফাজ্জল হোসেন মাল ও নাজমা বেগমের এর ছোট ছেলে মোঃ মুবিন মাল।
বাড়ির আঙ্গিনার কোনে বাবার কবর ও মায়ের মায়াবি মুখ দেখার আকুতি তার । ছেলের দৃষ্টি ফেরাতে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার দাবি দরিদ্র পরিবারের। দৃষ্টি ফেরাতে চোখ দান করতে চান মা নাজমা বেগম।
শরীয়তপুরের বড় সিধুলকুড়া গ্রামে পিতা মোফাজ্জল মালের কিনা ৬ শতাংশ বাড়ীর ছোট এই টিনের ঘর টিতে বিছানায় শুয়ে বসে থেকে বিছানা বন্ধী হয়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষন পাড় করছেন মোঃ মুবিন মাল। ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ১৮ তারিখ সকালে উত্তরায় ছাত্রদের আন্দোলনে রাজপথে মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন এই কিশোর মুবিন।
পিতার মৃত্যুতে সংসারের হাল ধরতে লেখাপড়া বন্ধ করে উত্তরার একটি কম্পিউটার কম্পোজ ফটোকপি দোকানের চাকুরি নিলেও ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয় এই মুবিন মাল। সেদিন মিছিলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে প্রানে বেচে গেলেও হারিয়ে ফেলেন দু চোখের আলো।
মোজাম্মেল হোসেন মাল ও নাজমা বেগমের তিন ছেলের মধ্যে মুবিন সবার ছোট । বড় ছেলে জুলহাস মানষিক প্রতিবন্ধী। আর মেঝো ছেলে পলাশ ও ছোট ছেলে এই মুবিন গুলিস্তান এলাকার একটি মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। কিন্তু বাবা মোজাম্মেল হোসেন মাল স্ট্রোক করে কর্মক্ষমতা হারালে, পিতাকে বাচাতে চিকিৎসার খরচ যোগাতে ও বাবা মায়ের মুখে আহার তুলে দিতে সংসারের হাল ধরেন পলাশ ও মুবিন। কিন্তু নিয়তি কেড়ে নেয় পিতা মোজাম্মেল হোসেন কে । দাফন করা হয় রাস্তার ধারে বাড়ীর আঙ্গিনায় এক কোনে।বেতন পেয়ে মাসের শেষে ছুটে আসতো গ্রামের বাড়ীতে বাবার কবর আর মায়ের মুখটি দেখতে। আজ বাড়ীতে স্থায়ী থাকলেও দেখতে পায় না বাবার কবর আর মায়ের মায়াবি মুখ খানা। পিতৃহীন মুবিন দৃষ্টিহীন কর্মক্ষমতা হারিয়ে অসহায় হয়ে বিছানা বন্ধী। একা একা কিছুই করতে পারছেন না।
প্রতিদিন মায়ের হাত ধরে আসেন বাবা মোজাম্মেল হোসেন এর কবরের পাশে । করেন কবর জিয়ারত। মায়ের আদর ভালবাসা যেন মাকে দেখার ইচ্ছা বাড়িয়ে তুলেছে বহুগুনে মুবিনকে । মুবিন তার মায়ের মুখ আর বাবার কবর খানা স্ব চোখে দেখতে চান । দেখতে চান ভাই ভাবি পরিবারের অন্যদের ।
গৃহবন্দী বিছানাবন্ধী মুবিন একটি বছরে নিজে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছেন। তিনি বলেন এভাবে বেচে থাকার চেয়ে যদি শহীদ হতাম তাও ভাল ছিল। সেইদিনের নির্মম ঘটনার বর্ণনা কালে তিনি বলেন এসব কথা।
কিশোর বয়সে যে মুবিন বাবার চিকিৎসাসহ সংসার চালাতে পরিবারের হাল ধরেছিল সেই মুবিন আজ বেচে আছে পরিবারের আশ্রয় সহায়তায়। আর ছোট শিশুর মতই মা নাজমা বেগম আগলে রেখেছেন মুবিনকে। মুবিনের খাওয়া দাওয়া গোসল চলাফেরা সব কিছুই হয মায়ের হাতে। তাইতো মুবিনের জীবনের অচল অবস্থা তার কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে । তবে মুবিন বেচে আছে এই শান্তনা ও সূখের শক্তিতেই মুবিনের প্রতি তার দরদ একটু বেশিই । নিজের চোখ দান করে হলেও মুবিনের দৃষ্টি ফেরাতে চায় মা নাজমা বেগম। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন মুবিনের মা নাজমা বেগম
মুবিনকে এখনও দেখতে আসেন আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশিরা। মুবিন বিনয়ি ভদ্র সভাবের মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র থেকেই তার প্রতি মানুষের ভালবাসা এমন। তারাও মুবিন ও মুবিনের পরিবারের পাশে সরকারকে সহায়তা নিয়ে দাড়ানোর অনুরোধ করেছেন। মুবিনের স্বপ্ন ছিল দালান ঘর তৈরী করবে মায়ের জন্য। আজ মুবিন অন্ধ হয়ে পরিবারের বোঝা। তাই ভাল ঘর তৈরী করে দেওয়ার দাবি গ্রামবাসীর। চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ও সেনা প্রধানের সহায়তা।
বর্তমানে মুবিনের চিকিৎসা হচ্ছে সিএমএস হাসপাতালে। জুলাই ফাউন্ডেশন ও জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তিন লক্ষ টাকা সহায়তা পেলেও তা খরচ হয়ে গেছে মুবিনের চিকিৎসার পিছনে। বর্তমানে সেনা প্রধানের সুনজরে মুবিনের ভাই পলাশের চাকুরী হয়েছে বিজিবিতে। তার দেয়া মাসিক ১০ হাজার টায় চলে সংসার। ২০২৪ এর জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শরীয়তপুর জেলায় ১৪ জন শহীদ হয়েছে আর আহত আছেন ৮৩ জন।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।