যেভাবে ‘আপসহীন নেত্রী’ হয়ে ওঠেন খালেদা জিয়া
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০০
চার দেয়ালের গণ্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোতে যিনি নিজেকে নেতৃত্বের শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, সেই আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। দৃঢ়তা, আত্মত্যাগ ও আপসহীন নেতৃত্বের এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন তিনি।
জেল, জুলুম ও নির্যাতনের মুখেও গণতন্ত্রের প্রশ্নে কখনো পিছু হটেননি খালেদা জিয়া। তার নির্ভীক রাজনৈতিক পথচলাই তাকে এনে দিয়েছে ‘আপসহীন নেত্রী’র ঐতিহাসিক উপাধি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে শহীদ হন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান। সেই আকস্মিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দিশেহারা হয়ে ওঠে দলীয় নেতাকর্মীরা। ঠিক সেই শোকাবহ ও অনিশ্চিত সময়েই রাজনীতির ময়দানে আবির্ভাব ঘটে বেগম খালেদা জিয়ার।
ব্যক্তিগত বেদনা আর স্বামীর শূন্যতা বুকে ধারণ করেই তিনি কাঁধে তুলে নেন একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। ১৯৮১ সাল থেকেই একদিকে দল পুনর্গঠন, অন্যদিকে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপসহীন অবস্থান নেন তিনি।
সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। শহীদ জিয়াউর রহমান রেখে যাওয়া বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথেই কোনো আপস ছাড়াই বিএনপিকে এগিয়ে নেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়ার দৃঢ় ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে পতন ঘটে স্বৈরাচার এরশাদের। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সেই আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান কাণ্ডারি।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয় এবং খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই ঐতিহাসিক অর্জন তাকে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করে।
বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয়তাবাদ, দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি কখনো একচুলও ছাড় দেননি। ভয় কিংবা লোভ—কোনোটির কাছেই মাথা নত করেননি। দীর্ঘদিন কারাবরণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং গুরুতর অসুস্থতার মধ্যেও তিনি মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি।
গণতন্ত্র ও ইসলামী মূল্যবোধের প্রশ্নে বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন দৃঢ়চেতা ও আপসহীন নেত্রী হিসেবে। ইতিহাসে তিনি চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।