সোনালি যুগে খলিফা নির্বাচন: ন্যায়, শুরা ও জনগণের সমর্থনের অনন্য দৃষ্টান্ত
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৫৮

গাজীপুর, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ – ইসলামের ইতিহাসে ‘সোনালি যুগ’ হিসেবে পরিচিত চার খলিফার (খুলাফায়ে রাশেদা) শাসনকাল ছিল প্রায় ৩০ বছরব্যাপী, যা ন্যায়, সত্য, সাম্য ও শরিয়াভিত্তিক নেতৃত্বের জন্য প্রসিদ্ধ। বিশেষত খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি ছিল অনন্য ও শিক্ষণীয়, যেখানে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্রের কোনো স্থান ছিল না।
কোরআন ও হাদিসে নেতৃত্ব নির্বাচনের মূলনীতি নেতৃত্ব বা খিলাফত ইসলামে একটি আমানত হিসেবে বিবেচিত। কোরআনে বলা হয়েছে, “আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দেন, তোমরা আমানত তাদের কাছে পৌঁছে দাও, যারা এর হকদার।” (সুরা নিসা, আয়াত ৫৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.)ও সতর্ক করেছেন, “যখন দায়িত্ব অযোগ্য ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হবে, তখন কিয়ামতের প্রতীক্ষা করো।”
প্রথম খলিফা: আবু বকর (রা.) রাসুল (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সাহাবারা সাকিফা বানু সাইদাহ এলাকায় সমবেত হয়ে শুরার মাধ্যমে আবু বকর (রা.)-কে নির্বাচিত করেন। মুহাজির ও আনসারের সর্বসম্মতি, যোগ্যতা ও রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য ছিলেন মূল ভিত্তি।
দ্বিতীয় খলিফা: উমর ফারুক (রা.) খলিফা আবু বকর (রা.) মৃত্যুশয্যায় উম্মাহর মতামত নিয়ে শীর্ষ সাহাবিদের পরামর্শের মাধ্যমে উমর (রা.)-কে মনোনীত করেন। উম্মাহর সর্বসম্মতিতে তিনি খলিফা হন।
তৃতীয় খলিফা: উসমান গনি (রা.) উমর (রা.) ইন্তেকালের আগে ছয়জন বিশিষ্ট সাহাবির ‘শুরা পরিষদ’ গঠন করেন। মুসলমানদের মতামতের ভিত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেয়ে উসমান (রা.) নির্বাচিত হন।
চতুর্থ খলিফা: আলী (রা.) উসমান (রা.)-এর শাহাদাতের পর মদিনার জনগণ ও সাহাবিরা আলী (রা.)-কে খলিফা হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি প্রথমে অস্বীকার করলেও, উম্মাহর ঐকমত্যে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
নির্বাচন পদ্ধতির মূল শিক্ষা শুরা ও পরামর্শে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রদান। সর্বসম্মতি বা সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের গুরুত্ব।
নেতৃত্ব একটি দায়িত্ব, সুবিধা নয়।
সোনালি যুগের খলিফা নির্বাচন পদ্ধতি মানব ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এখানে রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্রের কোনো স্থান ছিল না; বরং পরামর্শ, যোগ্যতা, জনগণের মতামত ও ন্যায়নিষ্ঠ নেতৃত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দূর করতে এই পদ্ধতি থেকে শিক্ষা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: মুহতামিম, জহিরুল উলুম মহিলা মাদরাসা, গাজীপুর
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।