বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে গুলিবর্ষণ: আইএস-সংশ্লিষ্ট বাবা-ছেলের হামলায় নিহত ১৬
অনলাইন ডেস্ক | আন্তর্জাতিক | প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৮
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনির জনপ্রিয় বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে এলোপাতাড়ি গুলির ঘটনায় দুই হামলাকারীর সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। হামলাকারীদের গাড়ি থেকে আইএস-এর পতাকাও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, হামলাকারীরা সম্পর্কে বাবা-ছেলে। ৫০ বছর বয়সী বাবার নাম সাজিদ আকরাম এবং তার ২৪ বছর বয়সী ছেলের নাম নাবিদ আকরাম।
রোববার ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব হানুক্কাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের সময় এই হামলা চালানো হয়। এলোপাতাড়ি গুলিতে ঘটনাস্থলেই অন্তত ১৫ জন নিহত হন। পরে পুলিশের গুলিতে সাজিদ আকরাম নিহত হলে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ জনে। গুরুতর আহত অবস্থায় তার ছেলে নাবিদ আকরাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন; তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ জানিয়েছে, নাবিদ আকরাম ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রথম অস্ট্রেলিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসেন। তবে সে সময় তার কাছ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকির ইঙ্গিত না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম এবিসি জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া নাবিদের সঙ্গে আইএস-এর সিডনি শাখার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল কি না—তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সন্ত্রাসবিরোধী পুলিশের ধারণা, বাবা ও ছেলে উভয়েই আইএস-এর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।
পুলিশের তথ্যমতে, সাজিদ আকরাম ১৯৯৮ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যান। পরবর্তীতে তার ভিসা পার্টনার ভিসা হয়ে রেসিডেন্ট রিটার্ন ভিসায় রূপান্তরিত হয়। তিনি বৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী ছিলেন এবং একটি বন্দুক ক্লাবের সদস্যও ছিলেন।
হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের বিষয়ে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হামলাকারীরা সম্ভবত একটি বোল্ট-অ্যাকশন রাইফেল ও একটি শটগান ব্যবহার করেছে।
তদন্তকারীদের ধারণা, ইহুদিবিদ্বেষ থেকেই এই হামলা চালানো হয়েছে। বাবা-ছেলের পারিবারিক পর্যায়েও ইহুদি বিদ্বেষ ছিল বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। পাশাপাশি, এই হামলার পেছনে আইএস-এর সরাসরি ভূমিকা আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের মতে, সমুদ্রসৈকতে গণহত্যার মাধ্যমে হামলাকারীরা ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতি একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদি-বিরোধী কর্মকাণ্ড বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন স্থানে ইহুদিদের লক্ষ্য করে হুমকি পোস্টার ও দেয়াললিখন দেখা গেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে সিএনএন সতর্ক করে জানায়, সিডনি ও মেলবোর্নে ইহুদিরা হামলার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। রোববার বন্ডাই সৈকতে হানুক্কাহ উৎসবে সমবেত ইহুদিরাই এই হামলার লক্ষ্যবস্তু হন।
বিশ্বজুড়ে গাজা যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত দুই বছরে ইহুদি বিদ্বেষ নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্তের কারণেই দেশটিতে ইহুদিরা হামলার শিকার হচ্ছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বন্ডাই সৈকতের হামলার সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির কোনো যোগসূত্র থাকার দাবি সরাসরি নাকচ করেছেন।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।