ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে পদ্মা সেতু অবরোধে উত্তাল শরীয়তপুর

শরীয়তপুর প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:২৯

ছবি: সংগৃহীত

প্রস্তাবিত ফরিদপুর বিভাগে শরীয়তপুর জেলার নাম অন্তর্ভুক্ত না করার দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা শরীয়তপুর। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সকালে জাজিরা উপজেলার নাওডোবায় পদ্মা সেতুর দক্ষিণ টোলপ্লাজা অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ‘জাগো শরীয়তপুর’ এবং সাধারণ মানুষ।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টানা এক ঘণ্টা অবরোধের কারণে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেতুতে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সেতুর দুই প্রান্তে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়।

বিক্ষোভে অংশ নেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যসহ হাজারো মানুষ।

এ সময় বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার একেএম নাসিরউদ্দিন কালু, ‘জাগো শরীয়তপুর’-এর আহ্বায়ক আমিন মোহাম্মদ জিতু, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন হাওলাদার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির, জাতীয় যুবশক্তির সংগঠক আকরাম হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,

“শরীয়তপুর ছিল, আছে, থাকবে ঢাকায়। ফরিদপুর বিভাগের নামে শরীয়তপুরকে টানার কোনো চেষ্টা মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে পদ্মা সেতু অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।”

তারা আরও বলেন,

“এটি শুধু একটি দাবি নয়—এটি শরীয়তপুরবাসীর আত্মমর্যাদা ও অস্তিত্বের লড়াই। প্রশাসন যদি এই অন্যায় সিদ্ধান্তের পথে এগোয়, তবে আন্দোলন নদী থেকে সড়ক, গ্রাম থেকে শহর—সবখানে বিস্তৃত হবে।”

‘জাগো শরীয়তপুর’-এর নেতারা জানান, এই আন্দোলন হঠাৎ নয়—এটি দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা। ২০১৫ সালে ফরিদপুর বিভাগ ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হলে শরীয়তপুরজুড়ে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। ২০২২ সালে ‘পদ্মা বিভাগ’ নামেও প্রস্তাব আসে, কিন্তু নিকার বৈঠকে তা অনুমোদন না পাওয়ায় বাস্তবায়িত হয়নি।

সম্প্রতি গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রি-নিকার বৈঠকে ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে নতুন বিভাগ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে শরীয়তপুরে আবারও আন্দোলনের আগুন জ্বলে ওঠে। সেই ধারাবাহিকতায় ১২ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক, সামাজিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতাদের বৈঠকে কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর শহরের দুবাই প্লাজায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘জাগো শরীয়তপুর’ ঘোষণা দেয়—

“নিকার বৈঠকে যদি শরীয়তপুরের নাম ফরিদপুর বিভাগে তোলা হয়, তবে পদ্মা সেতুসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চল অচল করে দেওয়া হবে।”

এরপর থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে অবরোধ, বিক্ষোভ, গণসমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি চলমান রয়েছে।

শেষ পর্যন্ত নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন,

“আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত লিখিতভাবে জানাক—শরীয়তপুর ফরিদপুর বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। অন্যথায় এই আন্দোলন আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top