জাহাঙ্গীরনগরে ‘গণপিটুনিতে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:১৫
 
                                        জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একদল শিক্ষার্থীর হামলায় আহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লা মারা গেছেন। সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সেলিমুজ্জামান সুজন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে মারধর করা হয়। বুধবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তবে গণপিটুনির পর ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। মারধরের পর শামীমকে রাত সাড়ে আটটার দিকে আশুলিয়া থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। চিকিৎসার জন্য পুলিশ তাকে সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সেলিমুজ্জামান সুজন বলেন, ‘তাকে রাত সোয়া নয়টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমরা পরীক্ষা করে জানতে পারি– উনি মারা গেছেন। মূলত উনি আগেই মারা গিয়েছিলেন। কী কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত করে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মারধরের পর শামীমকে প্রক্টর অফিসে সোপর্দ করলে– পরে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে পুলিশের গাড়িতে নেওয়ার সময়– তিনি স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গাড়িতে ওঠেন। সেই সময় তাকে দেখে গুরুতর আহত মনে হয়নি।
গণপিটুনিতে মৃত্যুর বিষয়টিকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘১৫ জুলাই উপাচার্যের বাসভবনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে শিক্ষার্থীরা আটকের পর মারধর করে প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেয়।
আমরা আশুলিয়া থানায় অবহিত করলে পুলিশের একটি টিম আসে। এসময় তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এরপর পুলিশে সোপর্দ করলে তিনি নিজে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে ওঠেন। তখন তাকে দেখে আশংকাজনক মনে হয়নি। পরবর্তীতে পুলিশের গাড়িতে মৃত্যুর বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। বিষয়টি ভালোভাবে না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না।’
এদিকে হামলার শিকার হয়ে সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লার মৃত্যুর ঘটনাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উল্লেখ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসানের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এতে ‘মব কিলিং মানি না, মানব না’, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা মানি না, মানব না’, ‘আমার ক্যাম্পাসে হত্যা কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘মব জাস্টিসে মৃত্যু হয়, মরার পরে বিচার নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে শোনা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেতাকে দুই দফায় গণপিটুনি দেওয়া হলো এবং এর ফলে তাঁর মৃত্যু হলো। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা বিচারবহির্ভূত যেকোনো হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে। কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে তাঁকে রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু কাউকে বিচারবহির্ভূতভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমর্থন করে না।’
এর আগে গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটক এলাকায় শামীম মোল্লাকে মারধর করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রক্টরিয়াল বডি’র হাতে তুলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে আশুলিয়া থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরপর রাত নয়টার দিকে চিকিৎসার জন্য সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
বিষয়:

 ভিডিও
                                        গ্যালারী
 ভিডিও
                                        গ্যালারী 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।