উচ্চরক্তচাপের কারণ ও করণীয়?

নিশি রহমান | প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারী ২০২৩, ০০:৪০

প্রতীকী ছবি

উচ্চরক্তচাপ বিশ্বজুড়ে একটি অতি পরিচিত রোগ। এতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা ও হঠাৎ করে মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। অনেক সময় বংশগত কারণে উচ্চরক্তচাপ হয়ে থাকে। আবার বদঅভ্যাসের কারণেও হয়ে থাকে।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রক্তচাপটা স্বাভাবিক মাত্রার ভেতরই থাকে। বয়স যত কম হয় রক্তচাপও তত কম হয়। যদি কারো রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং অধিকাংশ সময় এমনকি বিশ্রামকালীনও বেশি থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে, তিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী।

আরও পড়ুন>>> খেজুর কাঁচা রস পানে সর্বাত্মক সতর্ক থাকার পরামর্শ

উচ্চরক্তচাপ কি কোনো জটিল ব্যাধি ?

উচ্চ রক্তচাপ ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেক সময় উচ্চ রক্তচাপের কোনো প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যায় না। নীরবে উচ্চ রক্তচাপ শরীরের বিভিন্ন অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ জন্যই উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতক বলা যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত এবং চিকিৎসাবিহীন উচ্চ রক্তচাপ থেকে মারাত্মক শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

উচ্চরক্তচাপ হলে কী কী জটিলতা হতে পারে: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না থাকলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি অঙ্গে মারাত্মক ধরনের জটিলতা হতে পারে। যেমন- মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনিও চোখ।

কী কী কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয়: ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না, একে প্রাইমারি বা অ্যাসেন্সিয়াল রক্তচাপ বলে। কিছু কিছু বিষয় উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা বাড়ায়। কারণগুলো নিম্নরূপ:

অধিক ওজন অলস জীবনযাত্রা: যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে।এতে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় এবং এর ফলে অধিক ওজনসম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।

বংশানুক্রমিক: উচ্চ রক্তচাপের বংশগত ধারাবাহিকতা আছে, যদি বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে সন্তানেরও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশংকা থাকে। ধূমপায়ীদের শরীরে তামাকের নানারকম বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনি, শিরার নানারকম রোগ ও হৃদরাগ দেখা দিতে পারে।

অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ: খাওয়ার লবণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও বেড়ে যায়।

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার, যেমন- মাংস, মাখন ও ডুবোতেলে ভাজা খাবার খেলে ওজন বাড়বে। ডিমের হলুদ অংশ এবং কলিজা, গুর্দা, মগজ এসব খেলে রক্তে কলেস্টেরল বেড়ে যায়। রক্তে অতিরিক্ত কলেস্টেরল হলে রক্তনালির দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত মদ্যপান:  যারা নিয়মিত অত্যধিক পরিমাণে মদপান করে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ বেশি হয়।

ডায়াবেটিস: বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগীদের উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডায়েবেটিস আক্রান্ত রোগীদের উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ সম্পর্কে বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে যাদের ব্লাড সুগার অসম্ভব পরিমাণে ওঠানামা করে, হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তাদেরই।

অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা: অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে। কিছু কিছু রোগের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। নির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া গেলে একে বলা হয় সেকেন্ডারি হাইপারটেনশন। এ কারণগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো..

ধমনির বংশগত রোগ: গর্ভধারণ অবস্থায় অ্যাকলাম্পসিয়া ও প্রি-অ্যাকলাম্পসিয়া হলে অনেক দিন ধরে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির ব্যবহার, স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন গ্রহণ ও ব্যথানাশক কিছু কিছু ওষুধ খাওয়া।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে করণীয়: জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। একবার লক্ষ্য অনুযায়ী ওজনে পৌঁছলে সীমিত আহার করা উচিত ও ব্যায়াম অব্যাহত রাখতে হবে। ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ না খাওয়াই ভালো।

খাবার গ্রহণে সতর্কতা: কম চর্বি ও কম কলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন, খাসি বা গরুর মাংস, কলিজা, মগজ, গিলা, গুর্দা, ডিম কম খেতে হবে। বেশি আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করা ভালো।

ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। তামাক পাতা, জর্দা, গুল লাগানো ইত্যাদিও পরিহার করতে হবে।

মানসিক শারীরিক চাপ সামলানো: নিয়মিত বিশ্রাম, সময়মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে হবে।

নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা: নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। উচ্চ রক্তচাপ হলে কী চিকিৎসা করাতেই হবে: উচ্চ রক্তচাপ সারে না, একে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর জন্য নিয়মিত ওষুধপত্র সেবন করতে হবে। কোনোক্রমেই চিকিৎসকের নির্দেশ ছাড়া ওষুধ সেবন বন্ধ করা যাবে না। অনেকেই আবার উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত জানার পরও ওষুধ খেতে অনীহা প্রকাশ করেন। অনেকেই ভাবেন যে উচ্চ রক্তচাপ তার দৈনন্দিন জীবনপ্রবাহে কোনো সমস্যা করছে না বা রোগের কোনো লক্ষণ নেই, তাই উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে চান না। এ ভাবনাটাও সম্পূর্ণ ভুল। এ ধরনের রোগীরাই হঠাৎ হৃদরাগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হন, এমনকি মৃত্যুও হয়ে থাকে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top