মহান শিক্ষা দিবস আজ
সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ কী বলছে ? সর্বগ্রাসী শিক্ষা সঙ্কট উত্তরণে সোচ্চার হউক ছাত্রসমাজ...
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:৩৫
 
                                        আজ ১৭ সেপ্টেম্বর, মহান শিক্ষা দিবস। ১৯৬২ সালের এই দিনে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসন-শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল এ দেশের ছাত্রসমাজ। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের দুই মাস পর ১৯৫৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। শরীফ কমিশন নামে খ্যাত ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন তৎকালীন শিক্ষা সচিব এসএম শরীফ। ১১ সদস্যের এ কমিশন ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট প্রতিবেদন দেয়।
কমিশনের পেশ করা প্রতিবেদনের প্রস্তাবনাগুলো ছিল শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্র বেতন বাড়ানোর প্রস্তাবনা ছিল। পাশাপাশি ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত শরীফ কমিশনে উচ্চশিক্ষা ধনিশ্রেণির জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এছাড়া কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রস্তাব রাখে। এমনকি বাংলা বর্ণমালা সংস্কারেরও প্রস্তাব করে কমিশন।
প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে প্রণীত শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের শুরু থেকেই ছাত্রদের শক্তিশালী প্রতিরোধের মুখে পড়ে কমিশন। ছাত্র সংগঠনগুলো এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে রাজপথে সোচ্চার হয়। ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন পাকিস্তান সরকারের এ শিক্ষানীতির বিরোধিতা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সারাদেশে হরতাল পালনের ঘোষণা দেয় তৎকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।
ওই দিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। সমাবেশ শেষে মিছিল বের করা হয়। একপর্যায়ে মিছিলে পুলিশ পেছন থেকে লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালায়। ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন ময়দানের ছাত্রসমাবেশ থেকে শিক্ষানীতি বাতিল, হত্যার বিচারসহ ছাত্রসমাজের উত্থাপিত দাবি মানার জন্য চরমপত্র ঘোষণা করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন স্থগিত করে।
সরকারি হিসাবে সেদিনের পুলিশের হামলায় একজন নিহত, ৭৩ জন আহত ও ৫৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল- একজন নন, নিহত হয়েছেন মোস্তফা, বাবুল, ওয়াজিউল্লাহ। সেই থেকে প্রতি বছর এ দিনটিকে মহান শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করছে ছাত্র সমাজ।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন রাষ্ট্রের অঙ্গীকার ছিল গণমুখী, সার্বজনীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নের। সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে গণমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সার্বজনীন ধারার শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিটি সরকারের আমলেই তা হয়েছে উপেক্ষিত। আসলে সব সরকারই মুক্তবাজার অর্থনীতির দর্শনকে ধারণ করে ধনিকশ্রেণির স্বার্থরক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি প্রণয়ন করে, যার মধ্যে শিক্ষানীতি অন্যতম।
ফলে এখনও এদেশের ছাত্রসমাজকে শিক্ষার অধিকার আদায়ে নিরবচ্ছিন্ন লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। ৭৫ পরবর্তী প্রতিটি সরকার টাকা যার শিক্ষা তার’ এই নীতির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পালন করে গেছে অগ্রণী ভূমিকা। বর্তমান সরকারের আমলেও শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে, শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু কাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়েছে কিন্তু অন্যান্য শিক্ষা রিপোর্টের মতোই ছাত্রসমাজের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি।
৫২-র ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে ৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, যার অনিবার্য পরিণতিরূপে ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, তেমনিভাবে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্রসমাজ সর্বগ্রাসী শিক্ষা সঙ্কট উত্তরণে রচনা করবে ছাত্র গণআন্দোলন, যা বেগবান করবে সমাজ বিপ্লবের লড়াইকে। লাখো শহীদের স্বপ্ন পূরণে লড়াই জারি রাখতে হবে উত্তরসূরীদের।
বিষয়: ১৭ সেপ্টেম্বর মহান শিক্ষা দিবস ৬২-র শিক্ষা আন্দোলন শরীফ কমিশন শিক্ষানীতি সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ

 ভিডিও
                                        গ্যালারী
 ভিডিও
                                        গ্যালারী 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।