নাগরিকদের আত্মরক্ষার মৌলিক প্রশিক্ষণ চালু: জাতীয় রিজার্ভ ফোর্স গঠনের পাইলট
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:৩০
সরকার এক নজিরবিহীন উদ্যোগ নিল দেশে প্রায় ৯ হাজার তরুণ-তরুণীকে আত্মরক্ষার বিভিন্ন কলা-কৌশল ও আগ্নেয়াস্ত্র সম্পর্কে মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ১৫ দিনের আবাসিক কর্মশালা শুরু হচ্ছে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ইতোমধ্যে চালু আছে এবং নভেম্বর থেকেই প্রশিক্ষণ শুরুর কথা বলা হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানাচ্ছেন, এটি একটি পাইলট প্রকল্প যা গণপ্রতিরক্ষা বাস্তবায়নের অংশ। বয়সসীমা ১৮–৩৫ বছর। সরকারি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপি (BKSP)-র সাতটি আঞ্চলিক কেন্দ্রে মোট ৮২৫০ জন তরুণ ও ৬০০ জন তরুণী অংশ নেবে। প্রশিক্ষণ ১৫ দিন যাবৎকালীন এবং অংশগ্রহণকারীদের ৪২০০ টাকা ভাতা সহ থাকা, খাওয়া ও পোশাক সরবরাহ করা হবে।
প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তুতে রয়েছে: জুডো, কারাতে, তায়কোয়ান্ডো এবং শ্যুটিংয়ের মৌলিক কৌশল। তবে সরাসরি ‘লাইভ রাউন্ড ফায়ারিং’ অর্থাৎ প্রাণবন্ত গুলিপ্রয়োগ শিখানো এই পর্যায়ে করা হবে না। ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, গুলির বিষয়ে তাত্ত্বিক দিক ও গাড়ি-চালনা সম্পর্কিত প্রাকটিক্যাল — যেমন নেওয়া, নিশানা করা, পজিশনিং, ফলো-থ্রু, ট্রিগার বোঝানো হবে — কিন্তু বাস্তব গুলি ছোঁড়ার অনুমোদন ও বাজেট-অবকাঠামো জটিলতার কারণে এখন তা সম্ভব হয়নি।
উপদেষ্টা বলেছেন, লক্ষ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দেশীয় রিজার্ভ ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা। বর্তমানে পাইলট হিসেবে শুরু হলেও ভবিষ্যতে বাজেট ও অবকাঠামো বাড়ালে বছরে অন্তত ২০ হাজার যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে — এবং দশ বছরে ট্রেইন্ড ফোর্স দুই লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তাঁর কথায়, “সবসময় যে যুদ্ধ করতে হবে এমন নয়; কিন্তু একটা মোরাল থাকা দরকার যে রিজার্ভ ফোর্সের সংখ্যাটা বাড়ছে। আমাদের সামরিক ও ভৌগলিক বাস্তবতা বিবেচনায় গণপ্রতিরক্ষা অপরিহার্য।”
এই উদ্যোগের সঙ্গে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগও তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলছেন, এমন প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য যে কোনো দেশেরই একটি বিস্তৃত জাতীয় কৌশল ও নীতিমালা থাকে, যা সংসদে গৃহীত হয়। তিনি সতর্ক করেছেন যে একক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো পরিচালনা করা ঠিক নয় — কারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা পরে ভালও হতে পারে বা খারাপও হতে পারে। তিনি বলেন, “ব্যাকগ্রাউন্ড চেক না করলে ভুল লোক প্রশিক্ষণ পেতে পারে, সেটার ফলে ক্ষতিকর পরিণতি হতে পারে।”
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অবনতি ও কিছু সময় নিখোঁজ থাকা সরকারি অস্ত্রের ঘটনা সামনে থাকায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে। অবৈধ অস্ত্রের উপস্থিতি ও অনেকে বিদেশি সশস্ত্র সংগঠনে যোগ দেওয়ার নজিরও মনে করিয়ে দিয়েছে যে শৃঙ্খলাপূর্ণ, দায়বদ্ধ ব্যবস্থাপনা জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান বলেন, অস্ত্র-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিলে অনৈতিক বাজারে অবৈধ অস্ত্র-ব্যবসা বাড়তে পারে। অন্যদিকে সায়মা তাসনীম মত করেন যে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ জরুরি, বিশেষত মেয়েদের জন্য। ফলে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্পটি গণপ্রতিরক্ষার ধারণা থেকে নেয়া। তাদের দাবি—জনগণকে নিরাপত্তাসচেতনতা ও নূন্যতম দক্ষতা প্রদানই মূল উদ্দেশ্য। ভবিষ্যতে গুলির ব্যবহার শেখানোর ব্যাপারে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় বাজেট, অবকাঠামো ও অনুমোদন সংগ্রহ করে কাজ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা জোর দিয়ে বলছেন—এ ধরনের প্রশিক্ষণ চালাবে কি না, কারা পাবেন, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কিভাবে যাচাই করা হবে, তদ আরোপ হওয়ার পরে তাদের কাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে ইত্যাদি বিষয়ে স্পষ্ট, আইনগত ও সংসদীয় নীতিমালা না থাকলে ঝুঁকি বেশি।
প্রাথমিক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে ১৮–৩৫ বছরের মধ্যে যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে আবেদন করতে পারবেন। প্রশিক্ষণের সূচনা নভেম্বর থেকে ধাপে ধাপে করা হবে বলে সরকারি সারসংক্ষেপে উল্লেখ আছে।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।