প্রথম আলো–ডেইলি স্টার ও ছায়ানটে হামলা
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেখছেন বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি
স্টাফ রিপোর্টার । ঢাকা | প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৩
দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা ভবন এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত ১২ ডিসেম্বর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। পরে ১৮ ডিসেম্বর রাতে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে একটি মহল ওই রাতেই রাজধানীতে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা ভবন এবং ছায়ানটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ ওঠে।
হামলার ঘটনার পর রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। নেতারা বলছেন, এসব ঘটনা আসন্ন নির্বাচন বানচাল ও দেশকে অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনারই অংশ।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিতে চাইছে।
তিনি বলেন, ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড ও গণমাধ্যমে হামলাসহ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলে বিএনপি মনে করছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের নতুন সংস্করণ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। সরকারের নাকের ডগাতেই এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, অথচ জনগণ সরকারের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়।”
এ বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।
এদিকে, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনাগুলো নির্বাচন বানচালের অপকৌশল কি না, তা খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “সারা দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার কোনো পরিকল্পনা বা অপকৌশল রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা জরুরি।”
যুক্তরাজ্য সফররত জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, প্রবীণ সম্পাদক নুরুল কবিরের ওপর হামলা, কয়েকটি কালচারাল সেন্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবক হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।
তিনি বলেন, এসব ঘটনা পরিকল্পিতভাবে স্যাবোটাজ করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছে বলে জামায়াতের ধারণা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ঘটনার আগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়া এবং ঘটনার পর দীর্ঘ সময়েও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া প্রমাণ করে প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা দোসররা এই ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।
দেশবাসীর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বিভেদ ভুলে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
দৈনিক প্রথম আলো কার্যালয় পরিদর্শন শেষে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের মুখপাত্র ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা নির্বাচনের দিকেই এগোচ্ছিলাম। সেই নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের হামলা ও কারসাজি হতে পারে।”
সরকারের ভেতরের একটি মহলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ছাড়া এমন ঘটনা সম্ভব হতো না। এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের ভেতরে ফ্যাসিবাদী আমলের লোকজন এখনো রয়ে গেছে, যারা গণঅভ্যুত্থান ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ব্যর্থ করতে বারবার চেষ্টা করছে।
এদিকে, প্রথম আলো ভবন পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম বলেন, পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে যুক্ত একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী এসব চক্রান্ত করছে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আসনে প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শুরু করেছেন।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।