কাতারে ইসরাইলি হামলার পর তুরস্কে উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:১২

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা, লেবানন, ইরান ও ইয়েমেনে ধারাবাহিক হামলার পর এবার কাতারে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর পরই আঙ্কারায় বাড়ছে উদ্বেগ। তুরস্ক মনে করছে, তেলআবিবের আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখন তাদের দিকেও ঘুরে আসছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ উপসাগরীয় মিত্র কাতারে ইসরাইলি হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশটির বিশ্লেষকদের নজর পড়ে তুরস্কের দিকে। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক মাইকেল রুবিন সতর্ক করে বলেন, “ইসরাইলের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে তুরস্ক, ন্যাটো সদস্যপদও হয়তো রক্ষা করতে পারবে না।”

অন্যদিকে ইসরাইলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক মেইর মাসরি লেখেন, “আজ কাতার, কাল তুরস্ক।” এর জবাবে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের উপদেষ্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “তুরস্কের ওপর হামলা হলে ইসরাইলকে ভয়াবহ শাস্তি পেতে হবে।”

বিগত কয়েক মাস ধরেই ইসরাইলি গণমাধ্যমে তুরস্ককে “সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু” হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিশেষত, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে আঙ্কারার উপস্থিতি ও সিরিয়া পুনর্গঠনে ভূমিকা ইসরাইলের চোখে নতুন হুমকি। িএ কারণে গত আগস্টে তুরস্ক ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে।

কাতারে হামলার পর তুরস্কের ভেতর নতুন প্রশ্ন উঠেছে-ন্যাটো প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর? কারণ, কাতার যুক্তরাষ্ট্রের মেজর নন-ন্যাটো অ্যালাই হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

আটলান্টিক কাউন্সিলের ফেলো ওমর ওজকিজিলসিক বলেন, “তুরস্ক বহু আগেই বুঝেছে, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর ওপর নির্ভর করা যাবে না।”

সম্প্রতি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রকাশ্যে ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ধারণায় সমর্থন জানান। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, “এই পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো আঞ্চলিক দেশগুলোকে দুর্বল ও বিভক্ত রাখা।”

আঙ্কারা এটিকে সরাসরি নিজেদের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখছে।

সাবেক তুর্কি নৌ-অ্যাডমিরাল সেম গুরদেনিজ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তুরস্ক-ইসরাইলের প্রথম সংঘর্ষের ক্ষেত্র হতে পারে সিরিয়ার আকাশসীমা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের ছায়ায় গ্রিস, গ্রিক সাইপ্রাস ও ইসরাইল সাইপ্রাসে সামরিক ঘাঁটি শক্তিশালী করছে, যা তুরস্কের “ব্লু হোমল্যান্ড” নীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।


কাতারে ইসরাইলি হামলা, নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরাইল’ এজেন্ডা, সিরিয়ায় কর্তৃত্বের প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে তুরস্কের চোখে এখন ইসরাইল কেবল আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারে আগ্রাসী শক্তি। অন্যদিকে তুরস্কও তার সামুদ্রিক ও আঞ্চলিক কৌশল নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন সংঘর্ষের জন্য।

সূত্র: আল জাজিরা



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top