মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২

‘ফাশারের কসাই’ আবু লুলুর নেতৃত্বে সুদানে গণহত্যা: রক্তে ভাসছে এল-ফাশার শহর

নিজস্ব প্রতিবেদন | আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৩

ছবি: সংগৃহীত

সুদানের উত্তর দারফুর প্রদেশের এল-ফাশার শহরে র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) সমর্থিত সন্ত্রাসীদের নৃশংস তাণ্ডবে রক্তে ভাসছে পুরো এলাকা। সম্প্রতি ‘আবু লুলু’ নামে এক সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের খবর ছড়িয়ে পড়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। তিনি গর্বের সঙ্গে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ছবি প্রকাশ করে এখন ‘ফাশারের কসাই’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

গত সপ্তাহে আরএসএফ ঘোষণা দেয়, তারা ৫০০ দিনের অবরোধের পর এল-ফাশার শহর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এরপর থেকেই শুরু হয় অসহায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ। স্থানীয় সূত্র বলছে, মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ২,০০০-এরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রাস্তায় পড়ে আছে শত শত লাশ দাফন করারও কেউ নেই।

আসল নাম ফাতিহ আবদুল্লাহ ইদ্রিস হলেও তিনি “আবু লুলু” নামে পরিচিত। শহর দখলের আগে তিনি খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু হত্যাযজ্ঞ শুরু হতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ভয়ংকর ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানেই দেখা যায়, তিনি গর্বের সঙ্গে হত্যার স্বীকারোক্তি দিচ্ছেন এবং নিজেকে “স্বাধীন যোদ্ধা” দাবি করছেন।

একটি অডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আমি এল-ফাশারে এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছি।”
যদিও আরএসএফ দাবি করেছে, তাদের সঙ্গে আবু লুলুর কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রমাণ মিলছে—তিনি আরএসএফ-সমর্থিত গোষ্ঠীর সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন।

অবরোধ ও হামলার কারণে এল-ফাশার এখন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসক নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক শহরের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। খাদ্য, পানি, ওষুধের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। হাসপাতালগুলো লুটপাটের পর অচল হয়ে পড়েছে।

একজন স্থানীয় সাংবাদিক জানিয়েছেন, “মানুষ এখন গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে আছে। পান করার মতো পানি নেই, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শহরজুড়ে শুধু ধ্বংস আর মৃত্যু।”

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থাগুলো ফাশারে প্রবেশের চেষ্টা করলেও আরএসএফ তা বাধা দিচ্ছে। মানবিক করিডোর এখনো খোলা হয়নি। ফলে শহরে আটকা থাকা মানুষদের বাঁচার কোনো উপায় নেই।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, “আবু লুলুর মতো সন্ত্রাসীদের উত্থানই প্রমাণ করে, সুদানে নৈতিক অবক্ষয় ও মানবিক বিপর্যয় কোন মাত্রায় পৌঁছেছে।”

বার্তা সংস্থা তাসনিমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আরএসএফ সন্ত্রাসীদের পেছনে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রত্যক্ষ সহায়তা। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অপরাধের সঙ্গে সুদানের এই হত্যাযজ্ঞের ভয়াবহ মিল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে তারা।

বর্তমানে ফাশার শহরটি এক ‘লাশের নগরীতে’ পরিণত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে মরুভূমির পথে পাড়ি দিচ্ছে। স্থানীয় সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, সামনে আরও ভয়াবহ বাস্তুচ্যুতির ঢেউ আসছে—যেখানে বাঁচার মতো কোনো জায়গাই আর অবশিষ্ট থাকবে না।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top