ফেব্রুয়ারিতে ভোটে অনড় বিএনপি: ষড়যন্ত্রেও বদলাবে না অবস্থান
সুজন হাসান | প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৫, ১১:৪৬

২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সময়ের ঘূর্ণিপাকে জোরকদমে এগিয়ে চলছে রাজনীতি। সেই অগ্রযাত্রার কেন্দ্রে আজ যে মাসটির নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, সেটি হচ্ছে—ফেব্রুয়ারি। আর এই সময়েই নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে অটল ও আপসহীন অবস্থান নিয়েছে বিএনপি।
দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূলে—সব স্তরেই এখন একটিই বার্তা: “যা-ই ঘটুক, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন চাই। কোনো ছাড় নয়।"
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই সময়েই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে মনে করছে দলটি।
❝ষড়যন্ত্রের গন্ধ ও সচেতন প্রস্তুতি❞
বিএনপি আশঙ্কা করছে—জাতীয় নির্বাচনের নির্ধারিত সময় বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে। দলটির ভাষ্য অনুযায়ী, দেশে হঠাৎ করে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, হত্যা, মবোক্র্যাসি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে—যা নির্বাচনের পরিবেশ অস্থিতিশীল করারই ইঙ্গিত দেয়।
সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর নীরবতা ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপি প্রশ্ন তুলছে—“এ কি নিছক ব্যর্থতা, না কি ইচ্ছাকৃত নিস্ক্রিয়তা?”
❝‘ফেব্রুয়ারির ভোট চাই’ – লন্ডন বৈঠকের সিদ্ধান্ত❞
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক এবং লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে একমত হওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের প্রতি কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি—যা নিয়ে উদ্বিগ্ন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সরাসরি বলেন, "জাতীয় নির্বাচন আর পেছানো যাবে না। ষড়যন্ত্র করে লাভ নেই, দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ ফেব্রুয়ারির ভোটে।"
❝প্রার্থী বাছাইয়ে কঠোরতা, দল গোছানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা❞
আগামী নির্বাচনে যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী বাছাই করছে বিএনপি।দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, যাঁরা অতীতে দলের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন না, কিংবা সরকারপন্থী অবস্থান নিয়েছিলেন—তাঁদের প্রার্থী করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে বিতর্কিত, দুর্নীতিপরায়ণ বা ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন—তাঁদেরও বাদ দেওয়া হবে।
❝একক না জোট? সিদ্ধান্ত এখনো অনিশ্চিত❞
বিএনপি এখনও চূড়ান্ত করেনি—আগামী জাতীয় নির্বাচনে তারা এককভাবে অংশ নেবে, না কি যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে জোটে যাবে। তবে ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা চলমান। আসন ভাগাভাগির হিসাব-নিকাশ এখনো বাকি।
❝দ্বিধার মেঘে ঢাকা রাজনীতির আকাশ❞
যদিও প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের ভূমিকা ও নির্বাচন কমিশনের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ।‘জুলাই সনদ’ ও নির্ধারিত সময়সীমা না হলে নির্বাচনের ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তার গহ্বরে হারিয়ে যেতে পারে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে নির্বাচনের পরিবেশ নেই—এমন বার্তা দিতে চায় একটি মহল। কিন্তু তা সফল হবে না। ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হবে, সরকারকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বিএনপি বলছে, “ফেব্রুয়ারির বাইরে কোনো নির্বাচন নয়”—এ বার্তার মধ্যেই জেগে উঠেছে তাদের নির্বাচনমুখী নতুন রাজনৈতিক অবস্থান। আগামী দিনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।
বিষয়: BNP
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।