সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

আবরারের রংবদল: চবি রাজনীতিতে আলোচনার ঝড়

সুজন হাসান | প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৫, ১২:৪০

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্ররাজনীতি নতুন করে আলোচনায়। শিবিরের বর্তমান সোহরাওয়ার্দী হল সভাপতি আবরার ফারাবীর পুরনো ফেসবুক পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক। কারণ একটাই —তিনি এক সময় ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা, আর এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের হয়ে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আবরার ফারাবীর পুরনো কিছু ফেসবুক পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোতে দেখা যায়, তিনি এক সময় জামায়াত-শিবিরকে ‘খুনি সংগঠন’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিনেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

একটি পোস্টে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের প্রতি সম্মান প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছেন। একইসাথে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও উপগ্রুপ ভিএক্সের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়কে ‘প্রিয় ভাই’ বলে উল্লেখ করেছেন। এসব পোস্টের বেশিরভাগই ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে করা।

অতীতের ছায়া: ভাইরাল পোস্টের প্রেক্ষাপট

২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “২০০১ সালের ২৯ ডিসেম্বর খুনী জামায়াত-শিবিরের হাতে নির্মমভাবে নিহত চবি ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শহীদ আলী মরতুজা ভাইয়ের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।”

অন্যদিকে ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বরের একটি পোস্টে দেখা যায়, তিনি ছাত্রলীগের নেতা ড. রবিউল হাসানের প্রশংসা করে লেখেন:
“ছাত্রলীগ করার অপরাধে যৌবনে উনার জীবনের অনেক বসন্ত হারিয়েছেন... মনে রাখবেন রবিউল হাসান ভুইয়া স্যাররা আমাদের সম্পদ।”

অবস্থান বদলের ব্যাখ্যা: ফারাবীর বক্তব্য

বিতর্কের মুখে আবরার ফারাবী নিজেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, “২০২২ সালের জুন পর্যন্ত আমি ছাত্রলীগে ছিলাম, সেটা অস্বীকার করছি না। তবে এরপর থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। ২০২৩ সালে আমি ইসলামী ছাত্রশিবিরে যুক্ত হই এবং নিয়ম অনুযায়ী সদস্য হই, মানোন্নয়ন করি।”

তিনি আরও দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা ছেড়ে দিয়ে তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও “জুলাই বিপ্লব” এর সঙ্গে যুক্ত হন।

“আমি নিজেই ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করি,” বলেন ফারাবী।

সংগঠনের বক্তব্য: শিবির কী বলছে?

চবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, “আবরার ফারাবীর পুরনো পোস্টগুলো ২০২১-২২ সালের। তখন তিনি ছাত্রলীগে ছিলেন। এরপর তিনি আমাদের সংগঠনে যুক্ত হয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় মানোন্নয়ন পান এবং এখন দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন।”

তিনি আরও জানান, “২০২৪ সালের শুরুতেই আবরার সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতির দায়িত্ব পান। আগস্টের পর নয়, তার অনেক আগেই তিনি শিবিরের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।”

সমালোচনা ও বিতর্ক: দ্বিচারিতা নাকি পরিবর্তনের গল্প?

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ঘিরে নানা মত। কেউ বলছেন, এটি রাজনৈতিক দ্বিচারিতার নমুনা—এক সময়ের ঘোষিত শত্রু সংগঠনের নেতায় পরিণত হওয়া প্রশ্ন তো তুলবেই। আবার কেউ বলছেন, এটি ব্যক্তি পর্যায়ে ‘মতান্তরের অধিকার’ এবং রাজনৈতিক পরিপক্বতার বহিঃপ্রকাশ।

আবরার ফারাবীর এই রূপান্তর ছাত্ররাজনীতির নতুন এক বাস্তবতা সামনে এনে দিয়েছে—যেখানে আদর্শ, অবস্থান, এমনকি প্রতিপক্ষও বদলে যেতে পারে সময়ের সঙ্গে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—এই বদলের পেছনে রয়েছে কী ‘আদর্শগত উপলব্ধি’, নাকি ‘সুবিধাবাদী কৌশল’? উত্তর সময়ই দেবে।

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top