জ্ঞান, চিকিৎসা ও রাষ্ট্র পরিচালনায় অগ্রগামী নারী: সাহাবি শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)
ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:২৮
ইসলামি ইতিহাসে সূচনালগ্ন থেকেই মুসলিম নারীরা জ্ঞানচর্চা, সমাজগঠন ও মানবকল্যাণে রেখেছেন অসামান্য অবদান। সেই উজ্জ্বলতার অন্যতম নক্ষত্র হলেন নারী সাহাবি শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)— চিকিৎসক, শিক্ষিকা ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা হিসেবে যিনি মুসলিম সমাজে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছিলেন।
মক্কার সম্মানিত কুরাইশ পরিবারের সন্তান শিফা (রা.)–এর আসল নাম ছিল লাইলা। চিকিৎসায় অসাধারণ দক্ষতার কারণে তিনি ‘শিফা’ উপাধি পান। ইসলামের প্রথম যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেন এবং হিজরতের অগ্রগামী নারী সাহাবিদের একজন হিসেবে পরিচিত হন। মদিনায় তার ঘর ছিল মসজিদে নববীর সন্নিকটে। অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থা সংক্রান্ত নানা বিষয়ে নবীজি (সা.) তার পরামর্শ গ্রহণ করতেন বলে বর্ণিত রয়েছে। বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার তাকে “বুদ্ধিমতী ও মর্যাদাশীল” নারীদের কাতারে উল্লেখ করেছেন।
শিক্ষায় অগ্রদূত নারী
জাহেলি যুগে যখন আরব সমাজে সাক্ষরতা ছিল বিরল, তখন শিফা (রা.) ছিলেন অল্পসংখ্যক শিক্ষিত নারীদের একজন। তিনি শুধু পড়তে-লিখতে জানতেন না, বরং লেখাপড়া শেখাতেও পারদর্শী ছিলেন। তার প্রথম ছাত্রী ছিলেন হজরত ওমর (রা.)–এর কন্যা ও নবীজি (সা.)–এর স্ত্রী হাফসা (রা.)। হাফসার কাছেই রাখা হয় কোরআনের বহু প্রাথমিক পাণ্ডুলিপি— যা তার শিক্ষাদানের মূল্য আরও স্পষ্ট করে।
জ্ঞানচর্চাকে তিনি সদকার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে দেখতেন। নবীজির বাণী উদ্ধৃত করে তিনি বলতেন— একজন মুসলিম যখন জ্ঞান অর্জন করে অন্য মুসলিমকে শিক্ষা দেয়, তা সর্বোত্তম দান হিসেবে গণ্য হয়।
চিকিৎসায় প্রথম সারির নারী সাহাবি
তৎকালীন আরব সমাজে চিকিৎসা উন্নত না থাকলেও শিফা (রা.) ছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। একবার নবীজি (সা.) তাকে হাফসা (রা.)–কে ‘নামলা’ রোগের (সম্ভবত র্যাশ বা ফোস্কা) চিকিৎসা শেখাতে বলেন।
হলুদ ও ভিনেগারের মিশ্রণে তিনি বিশেষ ধরনের পেস্ট তৈরি করতেন, যা সে সময় ব্যাপকভাবে পরিচিতি পায়। চিকিৎসায় তার দক্ষতার প্রতি নবীজির (সা.) আস্থা এখানেই প্রতিফলিত হয়।
রাষ্ট্রীয় পদে প্রথম নারী কর্মকর্তা
রাষ্ট্র পরিচালনাতেও শিফা (রা.) রাখেন অগ্রণী ভূমিকা। খলিফা হজরত ওমর (রা.) তার বুদ্ধিমত্তা ও সততা বিবেচনায় মদিনার বাজার তদারকির দায়িত্ব প্রদান করেন। ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী, যিনি মুসলিম রাষ্ট্রে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রশাসনিক পদে নিয়োগ লাভ করেন।
ব্যবসায়ীদের প্রতারণা রোধ, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ন্যায্য লেনদেন নিশ্চিত করতে তার ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক।
চিরস্মরণীয় শিক্ষা
শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.)–এর জীবন শেখায়— প্রতিকূল পরিবেশেও জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি নারীকে পৌঁছে দিতে পারে উচ্চ সম্মানের আসনে। ইসলামি ইতিহাসে শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রশাসনে তিনি ছিলেন এক অনন্য আদর্শ।
সূত্র: মুসলিম ডট এসজি
এনএফ৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।