দুই বছরের নৃশংসতার পর ফিরছে ফিলিস্তিনিরা ঘরে
নিউজফ্ল্যাশ৭১ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬:৩০

দুই বছরের টানা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর অবশেষে গাজায় শুরু হয়েছে যুদ্ধবিরতি। চুক্তি অনুযায়ী, গাজার নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত সেনা সরিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ খবরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা।
মিসরের পর্যটন নগরী শারম আল শেখে বুধবার এক বৈঠকে হামাস ও ইসরায়েল এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা চুক্তিটির অনুমোদন দেয়। এরপর দুপুরে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি।
চুক্তি অনুযায়ী,
-
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাজার নির্দিষ্ট অংশ থেকে সেনা সরাবে ইসরায়েল।
-
৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাস জীবিত সব জিম্মিকে ফেরত দেবে।
-
পরে ইসরায়েল মুক্তি দেবে প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীকে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ২০ দফা ‘শান্তি পরিকল্পনা’র প্রথম ধাপ হিসেবেই দেখা হচ্ছে এই যুদ্ধবিরতিকে। মিসরে গত সোমবার থেকে হামাস ও ইসরায়েলের পরোক্ষ আলোচনা চলছিল। আলোচনায় যোগ দেয় ইসলামিক জিহাদ ও পিএফএলপি’র মতো সংগঠনও।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার। জাতিসংঘের এক স্বাধীন তদন্ত কমিশন সম্প্রতি এটিকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
হোয়াইট হাউস প্রকাশিত মানচিত্রে দেখা যায়— তিন ধাপে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল।
প্রথম ধাপে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে ৫৩%,
দ্বিতীয় ধাপে ৪০%,
শেষ ধাপে সীমান্ত বরাবর ১৫% এলাকা, যেখানে ‘নিরাপত্তা গণ্ডি’ গঠন করা হবে।
তবে এই ‘নিরাপত্তা গণ্ডি’ কতদিন থাকবে, তা স্পষ্ট নয়।
যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকেই গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চল থেকে মানুষ ফিরছেন গাজা নগরীতে।
নুসেইরাত শরণার্থী শিবির থেকে পরিবারের সঙ্গে ফিরছিলেন মেহেদি সাকলা নামের এক ফিলিস্তিনি। তিনি বলেন,
“জানি, সব ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবুও ফিরতে পারছি— এতেই খুশি।”
দুই বছরে গাজার ৯২ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
নষ্ট হয়েছে ৫১৮টি স্কুল, ৬৫৪টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
চাষাবাদের যোগ্য জমি এখন মাত্র দেড় শতাংশ।
চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, মিসর ও জর্ডানে গাজার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার টন ত্রাণ।
অবরোধের কারণে গত দুই বছরে গাজায় ভয়াবহ খাদ্যসংকট তৈরি হয়; অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৬০ জন, যাদের মধ্যে ১৫৪ শিশু।
এই যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে গঠন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক ‘টাস্কফোর্স’।
এতে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার, তুরস্কসহ বিভিন্ন আরব দেশের সেনারা থাকবেন।
দায়িত্বে থাকবে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (CENTCOM), তবে কোনো মার্কিন সেনা গাজায় প্রবেশ করবে না।
যুদ্ধবিরতির পরও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়।
ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রীরা ইতোমধ্যে এই চুক্তির বিরোধিতা করছেন।
জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন— হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল না করলে সরকার ছাড়বেন তিনি।
হামাসনিয়ন্ত্রিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেনা প্রত্যাহারের পর স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী দায়িত্ব নেবে, তবে এতে হামাসের সদস্য থাকবেন কি না— তা স্পষ্ট নয়।
ফিলিস্তিনি রাজনীতিক হানান আশরাউই সতর্ক করে বলেছেন—
“এখনই মূল চ্যালেঞ্জ শুরু।
আমাদের লক্ষ্য হতে হবে ফিলিস্তিনিদের ঐক্য ও ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করা।
গাজায় হামলা বন্ধ রেখে যদি পশ্চিম তীরে দখল চলে, তবে প্রকৃত শান্তি আসবে না।”
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।