গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন: ধ্বংসস্তূপে ফিরছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৮

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে গতকাল শনিবার হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি ফিরেছেন নিজেদের ভেঙেচুরে যাওয়া ঠিকানায়। কেউ বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপের দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন, কেউ স্বস্তি পাচ্ছেন নিজের ঘর এখনও টিকে আছে দেখে।
রাজা সালমি নামের এক ফিলিস্তিনি এএফপিকে বলেন, “আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটলাম। প্রতিটি পদক্ষেপে ভয় ও উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। বাড়ি অক্ষত অবস্থায় পাব তো! কিন্তু পৌঁছে দেখি—বাড়িটি আর নেই, শুধু ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। আমি দাঁড়িয়ে কেঁদেছিলাম। সব স্মৃতি এখন ধুলায় মিশে গেছে।”
গাজার আল-রিমাল ও আল-রান্তিসি এলাকার হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আল-রান্তিসি হাসপাতালের শিশু ও ক্যান্সার ওয়ার্ডের ভেতরে ভাঙা ছাদ, উল্টে যাওয়া খাট আর ছড়িয়ে থাকা চিকিৎসা সরঞ্জাম এক ভয়াবহ চিত্র তৈরি করেছে।
বাসিন্দা সাহের আবু আল-আত্তা বলেন, “আমি জানি না কী বলব। ছবিগুলোই যথেষ্ট—ধ্বংস, ধ্বংস আর ধ্বংস।”
গত শুক্রবার ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়ে গাজার কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। এরপর ক্লান্ত ও ক্ষয়িষ্ণু মানুষজন দীর্ঘ সারি বেঁধে উপকূলীয় সড়ক ধরে উত্তরের দিকে যাত্রা করেন।
হামাস নিয়ন্ত্রিত সিভিল ডিফেন্সের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ গাজা নগরীতে ফিরে এসেছে। শুক্রবার থেকে এ পর্যন্ত মোট প্রায় আড়াই লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ ঘরে ফিরেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে জীবিত ও মৃত মিলিয়ে বাকি ৪৭ জনকে ফেরত দেবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল আজীবন সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ বন্দি ও যুদ্ধ শুরুর পর আটক এক হাজার ৭০০ গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে।
ট্রাম্প জানান, সোমবারই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে। “সোমবার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন,” তিনি বলেন। “হামাস ৪৮ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে, আর ইসরায়েলি কারাগার থেকে দুই হাজার ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন।”
হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (পিএফএলপি) যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজার প্রশাসন সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনিদের বিষয়, কোনো বিদেশি নিয়ন্ত্রণ তারা মানবে না।
তাদের ভাষায়, “গাজায় বৃহৎ মাত্রার বাস্তুচ্যুতির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের তথাকথিত পরিকল্পনার পরাজয়।”
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে ইসরায়েল এক লাখ ৭০ হাজার টন ত্রাণ পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে।
তবে গাজায় এখনও তীব্র সংকট—ওষুধ, পানি, খাদ্য, জ্বালানি এবং আশ্রয়ের। প্রায় ২০ লাখ মানুষ শীতে ছাদহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
বাস্তুচ্যুত বাবা মারওয়ান আল-মাধুন বলেন, “আমার বাচ্চারা সবচেয়ে খুশি এই ভেবে যে, মাংস আর মুরগি আসছে। কারণ দুই বছর ধরে তারা এসব খেতে পারেনি।”
জাতিসংঘের মতে, গাজায় বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ মারাত্মক খাদ্য সংকটে ভুগছেন।
২৮ বছর বয়সী সামি মুসা বলেন, “আল্লাহর অশেষ রহমত, আমাদের বাড়ি এখনও দাঁড়িয়ে আছে, যদিও কিছু ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু গাজা এখন এক ভূতুড়ে শহর—লাশের গন্ধ এখনও বাতাসে ভাসছে।”
দুই বছরে ইসরায়েলের অভিযানে ৬৭ হাজার ৬৮২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।