বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২

যুদ্ধবিরতির পর গাজায় ফের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হামাস, অভ্যন্তরীণ দমন অভিযানে নিহত ৩৩

নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৫

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর গাজায় নিজেদের কর্তৃত্ব পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। গত শুক্রবার যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত হামাস বিভিন্ন গোষ্ঠীর ওপর অভিযান চালিয়ে অন্তত ৩৩ জনকে হত্যা করেছে। নিহতরা হামাসের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিল বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা সূত্র।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর হামলার পর হামাসের বিরুদ্ধে শুরু হয় ইসরাইলের ব্যাপক সামরিক অভিযান। সেই যুদ্ধে গাজার বহু এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর থেকে হামাস আবারও তাদের সদস্যদের রাস্তায় ফিরিয়ে আনছে—সতর্ক ও নিয়ন্ত্রিতভাবে।

গাজার নিরাপত্তা সূত্রগুলো জানায়, যুদ্ধ চলাকালীন হামাসের নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ করেছিল বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “যুদ্ধবিরতির পর হামাস বাহিনী ৩৩ জনকে হত্যা করেছে। সংঘর্ষে হামাসেরও ছয়জন কর্মী নিহত হয়েছে।” নিহতদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি বা তারা ইসরাইলের সমর্থন পাচ্ছিল কিনা—তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এছাড়া রাফাহ অঞ্চলে সক্রিয় হামাস-বিরোধী নেতা ইয়াসের আবু শাবাবের বিরুদ্ধেও অভিযান চালাচ্ছে হামাস। তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে হত্যা করা হয়েছে, এবং আবু শাবাবকেও হত্যার প্রচেষ্টা চলছে বলে সূত্র জানায়। হামাস তাকে ইসরাইলের সহযোগী বলে দাবি করলেও, তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

সোমবার সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুখোশধারী কয়েকজন বন্দুকধারী রাস্তার ওপর হাঁটু গেড়ে বসা অন্তত সাতজনকে গুলি করছে। তাদের কয়েকজনের মাথায় হামাসের মতো সবুজ ফিতা বাঁধা ছিল। উপস্থিত বেসামরিক দর্শকরা নিহতদের ‘সহযোগী’ বলে উল্লাস করছিল। রয়টার্স ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।

এর আগে, গত মাসেও হামাস-নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষ ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতার অভিযোগে অভিযুক্ত তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল।

সোমবার হামাস ইসরাইল থেকে দুই বছর আগে আটক শেষ জীবিত জিম্মিদের মুক্তি দেয়। এই সময়ে গাজার রাস্তায় হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি ইঙ্গিত দেয়—গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এখনো কঠিন চ্যালেঞ্জ।

হামাসের গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতা রয়টার্সকে বলেন, “আমরা কোনো নিরাপত্তা শূন্যতা তৈরি হতে দেব না। হামাস জননিরাপত্তা ও সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।”

হামাস আরও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে যদি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হয়, তারা তাদের অস্ত্র রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত থাকবে। তবে গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কাঠামো নিয়ে ফিলিস্তিনিদের মধ্যেই সমঝোতা হওয়া উচিত, এতে কোনো বিদেশি নিয়ন্ত্রণ থাকা যাবে না।

ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক রেহাম ওউদা মনে করেন, “হামাসের এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা করা বা যুদ্ধকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা গোষ্ঠীগুলোকে ভয় দেখানো। একই সঙ্গে হামাস দেখাতে চাইছে যে, ভবিষ্যতের নতুন সরকারেও তাদের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা উচিত।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top