শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২

পার্বত্য চট্টগ্রামে আড়াইশ ক্যাম্প চায় সেনা সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪১

বাংলাদেশ সোনাবাহিনী | ছবি: সংগৃহীত

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারতীয় মদতপুষ্ট সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তার সহযোগীদের কর্মকাণ্ডে ত্রাতা বৃদ্ধি পেয়েছে- ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ উসকানি, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পাহাড়ে হামলা, চাঁদাবাজি ও অপহরণ এসব অভিযোগে স্থানীয় সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সূত্র এমনই বলছে। এ পরিস্থিতিতে পার্বত্য এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের জন্য আড়াইশটি নতুন সেনা ক্যাম্প স্থাপনের দাবি উঠেছে।

 

সেনাবাহিনীর অগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, শান্তিচুক্তির পর ক্যাম্প কমে যাওয়ায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো শক্তি সঞ্চয় করেছে। বর্তমানে তারা প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা যায়, গত এক বছরে পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো মোট প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে—রাঙামাটিতে ২৪৪ কোটি, খাগড়াছড়িতে ৮৬ কোটি এবং বান্দরবানে ২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইউপিডিএফ একাই প্রায় ১০৪ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে বলে দাবি করা হয়েছে।

 

সেনা কর্মকর্তারা জানান, ২০০৯ সাল থেকে ইউপিডিএফ ও সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ৩৩২ জনকে অপহরণ করেছে; একই সময়কালেই ৮৯ জন হত্যার শিকার হয়েছেন—এদের মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য ও সেনাবাহিনীর ১৬ সদস্যও রয়েছেন। সাম্প্রতিককালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোরanggung কার্যক্রমের তীব্রতার নতুন নমুনা দেখা গেছে।

 

সীমান্তবর্তী ভারতের মিজোরামে অবস্থানকারী ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সংগ্রহ করে এসব সশস্ত্র সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকছে—সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা এ তথ্য জানান। খাগড়াছড়ি জোনে বর্তমানে ৯০টি, রাঙামাটিতে ৭০টি এবং বান্দরবানে ৫০টি—মোট ২১০টি সেনা ক্যাম্প থাকলেও পাহাড়ের বিস্তৃতি ও ভূগোল বিবেচনায় তা পর্যাপ্ত নয়। তাই অন্তত ২৫০টি ক্যাম্পে উন্নীত করার পরামর্শ এসেছে, যাতে প্রতিটি রুটে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানো যায়, অস্ত্রপ্রবাহ বন্ধ করা যায় এবং চাঁদাবাজি ও অপহরণ রোধ করা সম্ভব হয়।

 

সেনাবাহিনীর এক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, নতুন ক্যাম্প স্থাপন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হতে হবে; তবু সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায় দ্রুত উপস্থিতি না থাকলে সন্ত্রাসীরা ফাঁকফোকর কাজে লাগাবে। একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল বলেন, ধর্ষণের নাটক সাজিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর মতো কৌশল ইতোমধ্যে প্রয়োগ করা হয়েছে—এ ধরনের ষড়যন্ত্র রুখতে সেনাবাহিনীর দ্রুত উপস্থিতি জরুরি।

 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে সন্ত্রাসী তৎপরতা, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যাকাণ্ড নতুন মাত্রা পেয়েছে; তাই ক্যাম্প প্রত্যাহারের কোনও কারণ নেই—বরং নজরদারি ও অভিযান বৃদ্ধি করা উচিত। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শহীদুজ্জামানও জানান, মিজোরাম ও ত্রিপুরা থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র নিয়ে দলিলগুলো প্রেরিত হচ্ছে—সীমান্তবর্তী এলাকায় কার্যকর নজরদারি ছাড়া সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে।

 

সেনাবাহিনীর বক্তব্যে বলা হয়েছে, বর্তমান নীতি ‘নো কম্প্রোমাইজ’—সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনও আপস বা আলাপ নয়; সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা দাবি করেছেন, পর্যাপ্ত ক্যাম্প স্থাপিত হলে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দ্রুত দমন করা যাবে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

 

সূত্র: আমার দেশ

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top