রানীশংকৈলে আওয়ামী লীগ কর্মী আটক নিয়ে থানায় যুবদল নেতার হুমকি!
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৯
ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থানায় আটক আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের না ছাড়ায় থানার ওসি ও পুলিশ সদস্যদের গালিগালাজ করে ‘হাড়গোড় ভেঙে দেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন যুবদল ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে রাণীশংকৈল থানায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ নিজ উদ্যোগে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম।
রাণীশংকৈল থানা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) মধ্যরাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের চার কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তারা হলেন—
-
বাচোর ইউনিয়নের রাজোর এলাকার মৃত বজির উদ্দিনের ছেলে হামিদুর রহমান (৬০),
-
তার ছেলে সারোয়ার নুর লিওন (৩২),
-
ভাউলারবস্তি সম্পদবাড়ি এলাকার মৃত হুসেন আলীর ছেলে খলিলুর রহমান (৫০) এবং
-
ধর্মগড় এলাকার এনামুল হকের ছেলে জিয়াউর রহমান (৪২)।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে হামিদুর ও সারোয়ার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলামের এলাকায় বাসিন্দা। তাদের আটক করার সময় জাহিদুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশকে চাপ দেন তাদের ছেড়ে দিতে, তবে পুলিশ নির্দেশ অমান্য করে চারজনকেই থানায় নিয়ে আসে।
পুলিশ জানায়, ঘটনার পর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুলের নেতৃত্বে প্রায় ৩০–৩৫ জন নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজন থানায় উপস্থিত হন।
পরে পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. নাজমুল হুদা মিঠু থানায় গিয়ে আটক দুজনকে তার আত্মীয় দাবি করে ওসিকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান এবং আর্থিক প্রস্তাবও দেন।
ওসি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে মিঠু ক্ষিপ্ত হয়ে ওসি ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং বলেন,
“হাড়গোড় ভেঙে দেব, থানা উড়িয়ে দেব, বাইরে গেলে ঠ্যাং ভেঙে দেব, কীভাবে চাকরি করেন দেখে নেব!”
অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা নাজমুল হুদা মিঠু বলেন,
“রাতে কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে, তাদের মধ্যে আমার ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিল। আমি ওসিকে ফোন দিচ্ছিলাম, পরে তিনি নিজেই আমাকে থানায় ডাকেন। আমি থানায় গিয়ে বলেছি তারা কোনো দল করে না। তখন ওসি ক্ষেপে যান।”
তিনি দাবি করেন, থানায় কোনো ছিনতাই বা হুমকির ঘটনা ঘটেনি। বরং তিনি আগের একটি ঘটনার উদাহরণ দিচ্ছিলেন, যা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
রাণীশংকৈল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আরশেদুল হক বলেন,
“আওয়ামী লীগের চারজন আসামি ধরেছিলাম। এজন্যই যুবদল সভাপতি মিঠু আমাকে গালিগালাজ করেন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। শুধু আমাকে নয়, যিনি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তাকেও হুমকি দেন।”
তিনি আরও জানান, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে এবং তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন,
“ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা ইতিমধ্যে জিডি করেছি এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার। তদন্ত শেষে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।