রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫, ২৫ কার্তিক ১৪৩২

ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ ও অস্থিরতা

পেঁয়াজের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ ও অস্থিরতা

নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:২৭

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম গত দশ দিনে প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হওয়া, ভারত থেকে আমদানির সুযোগ বন্ধ থাকা, এবং কিছু ব্যবসায়ীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকে মূল কারণ হিসেবে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। ক্রেতারা হঠাৎ দাম বৃদ্ধির কারণে আতঙ্কিত। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যথাযথ তদারকি ও সময়মতো আমদানির অনুমতি না দিলে দাম আরও বাড়তে পারে।

রাজধানীর গুদারাঘাট কাঁচাবাজারে খুচরা ব্যবসায়ী রিপন মিয়া জানিয়েছেন, "গতকাল পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১০০ টাকায়, আজ তা মান ভেদে ১১৫–১২০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনি, সেই অনুযায়ী বিক্রি করতে বাধ্য।

ঢাকার উত্তর বাড্ডার বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলছেন, "গত সপ্তাহে কেজি প্রতি ৬০ টাকা দিয়ে পেঁয়াজ কিনেছিলাম, আজ কিনতে হলো ১২০ টাকা দিয়ে। হঠাৎ দাম দ্বিগুণ হওয়ায় অনেকটা বিপাকে পড়েছি।"

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও রাজশাহীর পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। এ সময়ে কিছু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বৃদ্ধি করছেন বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।

রাজবাড়ীর কৃষক ছোরাপ আলী জানিয়েছেন, অন্য বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রবি মৌসুমের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারি। কিন্তু এবছর উৎপাদন কিছুটা দেরিতে শুরু হওয়ায় পেঁয়াজ জমিতে রয়েছে, ঘরে তুলতেও সময় লাগছে।

পেঁয়াজ আমদানিকারক জাহেদী বলেন, সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিচ্ছে না। দুই মাস আগে অল্প কিছু পেঁয়াজ এসেছিল ভারত ও চীন থেকে। যদি আজ আইপি খোলার অনুমতি দেওয়া হয়, কালকেই তার প্রভাব বাজারে পড়বে।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ সীমিত করে দাম বৃদ্ধি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাজার তদারকির দুর্বলতাও ক্রেতাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন এবং চাহিদার যথাযথ তথ্য না থাকার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছেন। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) উল্লেখ করেছেন, স্টক যথেষ্ট থাকলে নতুন পেঁয়াজ আসার আগেও চাহিদা পূরণ সম্ভব।

 

খুচরা বাজারে:

প্রতি কেজি  দেশি পেঁয়াজ   ১১০–১২০ টাকা
পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ   ৯৫–১০৫ টাকা
গত দশ দিনে বৃদ্ধি দেশি পেঁয়াজ  ৬০–৬৫ টাকা থেকে ১২০ টাকা

 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৫–২৭ লাখ টন, দেশীয় উৎপাদন প্রায় ২১ লাখ টন। প্রতি বছর ছয় লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির প্রয়োজন হয়। তবে ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন মনে করেন, দেশে উৎপাদিত পরিমাণ যথেষ্ট, তাই আমদানি বাধ্যতামূলক নয়।

বাজার বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তবে যদি সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী আমদানির সুযোগ দেয় এবং বাজার তদারকি জোরদার করে, তাহলে ক্রেতারা এই সময়টুকু সহজে পার করতে পারবে।

বাজার তদারকি বাড়িয়ে কৃত্রিম সংকট বন্ধ করা গেলে এই সময়টুকু সহজেই পার করা সম্ভব। সরকার চাইলে প্রয়োজন অনুযায়ী আমদানির সুযোগ দিতে পারে।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে মূলত মৌসুমের শেষ, আমদানির সীমাবদ্ধতা ও কৃত্রিম সংকট দায়ী। নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দাম কিছুটা বাড়তে পারে। ক্রেতাদের স্বস্তি ফিরানোর জন্য সরকার ও বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোকে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top