গৌরব থেকে গ্লানিতে: কেন বন্ধ হয়ে গেল আদমজী জুট মিল?
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৯ জুন ২০২৫, ১৬:০৬

এটা ছিল এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল—আদমজী জুট মিল। কিন্তু এখন? শুধুই স্মৃতি। বাংলাদেশের গর্বের এই প্রতিষ্ঠানটি কেন বন্ধ হয়ে গেল? চলুন জেনে নিই আদমজীর উত্থান আর করুণ পতনের গল্প।
১৯৫১ সাল। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তীরে ২৯৭ একর জমিতে গড়ে ওঠে আদমজী জুট মিল। তিন ভাই—ওয়াহিদ, জাকারিয়া ও গুল মোহাম্মদ আদমজী এই বিশাল পাটকলটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতি বছর হাজার হাজার টন পাটজাত পণ্য রপ্তানি হতো ইউরোপ, আমেরিকা, চীনসহ নানা দেশে।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতীয়করণ করা হয়। আদমজী চলে যায় সরকারি মালিকানায়, বিজেএমসির অধীনে। এবং এখান থেকেই শুরু হয় পতনের সূচনা।
একদিকে দুর্নীতি, অন্যদিকে অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ। উৎপাদনে অনিয়ম, শ্রমিকদের রাজনীতিকরণ আর যন্ত্রপাতির সংকট—সব মিলিয়ে মিলটি পড়ে যায় গভীর লোকসানে। ১৯৮০-এর দশকে যখন বিশ্ব পাটের বদলে প্লাস্টিক বেছে নিচ্ছে, তখনও আদমজী ছিল পুরোনো মেশিনে, পুরোনো পদ্ধতিতে।
বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা মানের পাট উৎপাদন করলেও, ভারত ও চীন প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেক এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ রপ্তানিমুখী ছিল, তারা ছিল প্রোডাক্ট ডাইভার্সিফিকেশনে। ২০০২ সালের ৩০ জুন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী বন্ধ হয়ে যায়।
২৫ হাজার শ্রমিক হারায় কাজ, আর ইতিহাসে লেখা হয় এক করুণ অধ্যায়ের সমাপ্তি। তবে সেই জায়গাতেই আজ গড়ে উঠেছে আদমজী ইপিজেড। যেখানে কাজ করছেন ৫৬ হাজারের বেশি শ্রমিক। রপ্তানি হচ্ছে কোটি কোটি ডলারের পণ্য।
আদমজী বন্ধ হয়েছে, কিন্তু পাটের সম্ভাবনা এখনো অমলিন। পরিকল্পনা, প্রযুক্তি আর স্বচ্ছতা থাকলে পাটই আবার হতে পারে বাংলাদেশের নতুন সোনালী ভবিষ্যৎ।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।