দেশে ২.৫ লাখ নিবন্ধনহীন গাড়ি, রাজস্ব ক্ষতি বছরে ৬,২৫০ কোটি টাকা
মিঠু মুরাদ | প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:২৪

দেশের বিভিন্ন সড়কে এখনও প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ গাড়ি নিবন্ধনহীনভাবে চলাচল করছে। ফলে গাড়ি মালিকরা সরকারের করের আওতার বাইরে থাকছেন। এতে প্রতিবছর সরকার প্রায় ৬ হাজার ২৫০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলনকক্ষে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মোটরযানে কিউআর কোড সংবলিত ই-ট্যাক্স টোকেন সনদ বিষয়ক সভার কার্যবিবরণী থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ৬৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৭৩টি। এর মধ্যে রয়েছে বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, পিকআপ, জিপ, ট্রাক্টর ও ট্যাক্সি ক্যাব।
বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, “এখনও দুই–আড়াই লাখ গাড়ির নিবন্ধন হয়নি। এসব গাড়িকে নিবন্ধনের আওতায় আনা প্রয়োজন। ই-ট্যাক্স টোকেন বাস্তবায়ন হলে সুবিধা হবে।”
অর্থ বিভাগের উপসচিব মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, “শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য দেশেও এই ধরনের সিস্টেম চালু রয়েছে। যেকোনো গাড়ির বডি স্ক্যান করলে তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত ডেটাবেসে চলে আসে।”
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) সম্প্রতি পাঁচ হাজার ৪৮৯টি বিলাসবহুল গাড়ির কর নথি যাচাই করে দেখেছে, এক হাজার ৩৩৯ জন মালিক কর ফাঁকি দিয়েছেন। এই গাড়ির বাজারদর এক কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত। এনবিআর ধারণা করছে, এতে এক হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে।
আয়কর আইন-২০২৩ অনুযায়ী, সব সম্পদের তথ্য কর নথিতে উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। উল্লেখ না করলে জরিমানা ও ফৌজদারি মামলা হতে পারে।
দেশে গাড়ির ইঞ্জিন ক্ষমতা অনুযায়ী অগ্রিম কর নির্ধারণ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৫০০ সিসির কম গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকা, ১৫০০–২০০০ সিসির গাড়ির জন্য ৫০ হাজার টাকা, ২০০০–২৫০০ সিসির জন্য ৭৫ হাজার টাকা, ২৫০০–৩০০০ সিসির জন্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩০০০–৩৫০০ সিসির জন্য দুই লাখ টাকা এবং ৩৫০০ সিসির বেশি গাড়ির জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকা।
দেশে ব্যক্তিগত গাড়ির প্রায় ৮০ শতাংশই ১৫০০ সিসির কম। তাই আড়াই লাখ গাড়ি নিবন্ধনের আওতায় আনা হলে কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা করে অগ্রিম কর জমা হতো।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, নিবন্ধনহীন গাড়ি নিবন্ধনের আওতায় আনা ও ই-ট্যাক্স টোকেন চালু করা হবে। এনবিআরের প্রতিনিধি জানান, এই পদ্ধতি চালু হলে কর আদায় বাড়বে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমান ডিজিটাল সিস্টেমে মোবাইল ব্যাংকিং ও ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে টোল ও কর অনলাইনে পরিশোধ করা সম্ভব। তবে কিউআর কোড নকল প্রতিরোধের জন্য ই-সাইন সংযুক্তি এবং ভেরিফিকেশন অ্যাপ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
বিআরটিএর নিবন্ধন ছাড়া কর আদায়ের সুযোগ সীমিত। তাই প্রথমে গাড়ি নিবন্ধনে জোর দেওয়াই প্রয়োজন।
সুত্র: কালের কন্ঠ
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।