রাষ্ট্র নীরব, মানুষ ক্ষুব্ধ—মব রুলে চলছে রক্তাক্ত ন্যায়
রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২৫, ১৭:১৬

মবের মুল্লুকে আপনাকে স্বাগত। মব রুল বা মবোক্রেসিতে দেশাক্রান্ত। ঘটছে একের পর এক মবকাণ্ড। এটাই এখন বাস্তবতা। আইনের শাসনে ভরসা নেই। জায়গা নিয়েছে উন্মত্ত জনতার শাসন। সমস্বরে উই ওয়ান্ট জাস্টিস। সেখানে এখন মব জাস্টিস। জঙ্গল জাস্টিস। মব লিঞ্চিং। ডেমোক্রেসির বদলে ওখলোক্রেসি। যত দোষ – জনরোষ। মনোজগতের বৈকল্য।
কেন এমন হচ্ছে। বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন আর দীর্ঘদিনের ক্ষোভই কারণ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে গণঅসন্তোষ। দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা করে হাতে আইন তুলে নেয় উত্তেজিত জনতা। জমে থাকা ক্ষোভ বিস্ফোরণে রূপ নেয়। তখন আইন নয়। ন্যায়ের নামে প্রতিশোধ চলে।
মবের নামে কখনও পিটিয়ে হত্যা। মারধর করে পুলিশের হাতে সোপর্দ। লুটপাট, হেনস্তা। পদ থেকে সরিয়ে জুতার মালা পরিয়ে ঘোরানো। সমাজমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া। মিমে রূপ নিচ্ছে বিচারহীনতা।পেছনে কারণ কী। জবাব এসেছে, আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা। এটাই প্রধান সংকট। মনে জমা থাকা ক্ষোভ। অবিশ্বাস বা নৈতিকতার অভাব। ইনসাফ কায়েমের নামে নিজেদের আক্রোশ মেটানো। যেখানে বিচারব্যবস্থা দূর্বল। সেখানে মানুষ নিজেই বিচারক হয়ে ওঠে।
উচ্ছৃঙ্খল গণবিচার সংস্কৃতি। নৈরাজ্যবাদ। ফেনোমেনা বা প্রপঞ্চ। প্যারাডক্স বুমেরাং। মব জাস্টিস বিচারহীনতার সংস্কৃতিকেই প্রমোট করে। সরকারী পেটোয়া বাহিনী নিষ্ক্রিয়। মব জাস্টিস সক্রিয়। শক্ত অবস্থান নেই রাষ্ট্রযন্ত্রের। নেই কার্যকরী পদক্ষেপ। কঠোরতাও ঝিমিয়ে।
মানুষের আচরণটাও বদলানো দরকার। নৈতিকতা। সহনশীলতা। যুক্তিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। অন্ধকারের বুকে আলো ফুটাতে পারে। জনচিন্তায় গভীর ট্রমা নেই ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীদের। তারা ভয় পান। সুবিধাবাদী ইতর তত্ত্বকার। অনেক বেশি আবেগী, যুক্তিহীন ও দায়িত্বহীন। উসকানি দিতে পারেন। মুক্তির মিছিলে দাঁড়াতে পারেন না।
একটা মব লিঞ্চিং মানে দশটা নতুন মবের শঙ্কা। একটা গণপিটুনি মানে এক নতুন বার্তা। যেন কানে কানে বলছে—তুমি আইন তুলে নিতে পারো নিজের হাতেই। এই সংস্কৃতি নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলে। এটা প্যারাডক্স বুমেরাং।
এভাবে বিচারহীনতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গিয়ে উল্টো ফল হয়। আবার সেই বিচারহীনতাকেই প্রমোট করা হয়। পেটোয়া বাহিনীগুলো রাজনৈতিক ইশারায় চলে। সাধারণ মানুষের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ায় না। এই দেশে আইনের হাত লম্বা। শুধু প্রয়োগ ছোট। এই দেশে বিচার আছে—শুধু ন্যায় নেই। এই দেশে শিক্ষিত মানুষ আছে—শুধু বিবেকী নেই। এটাই মবের মুল্লুক। যেখানে বিচার নয়, বিষাদ গিলছে মানুষ।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।