শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

ঝড়ের রাতে জন্ম, বিপ্লবের বুকে মৃত্যু, লাল আগুনের নাম ফরহাদ

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০২৫, ১৪:৪৪

ছবি: সংগৃহীত

ঝড়ের রাতে জন্ম। ৫ জুলাই, ১৯৩৮। মা নাম রাখলেন বাদল। বাবা দিলেন নাম—মোহাম্মদ ফরহাদ। লোকজন চিনলো কমরেড ফরহাদ নামে। কমরেড—শুধু তকমা নয়, জীবনদর্শন।

১৫ বছর বয়সে রাজনীতি। কমিউনিস্ট পার্টির কাজ শুরু। ১৬ বছরেই রাজশাহী জেলে। কোমরে দড়ি। মা ছুটে এলেন মঙ্গলপুর স্টেশনে। ছেলের চোখে জল নেই। বাবা জিজ্ঞেস করলেন—রাজনীতি, না পড়াশোনা? ফরহাদের উত্তর দুটোই। জেলও যাব।

১৯৫৩ সালে ম্যাট্রিক পাস। দিনাজপুর কলেজে ছাত্র সংসদে নেতা। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের মুখ। তখনই মাথার দাম ঘোষণা হয়—এক হাজার টাকা। ছদ্মনাম কবির ভাই। আত্মগোপনে থেকে লড়াই।

১৯৭১-এর মার্চে সবার আগে বলেছিলেন—২৫ তারিখ কিছু হতে পারে। বলেন, সন্ধ্যার পর গা ঢাকা দাও। গণহত্যা হয়েছিল ঠিকই। কলকাতায় গিয়ে শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধ পত্রিকা। গঠন করেন গেরিলা বাহিনী। নেতৃত্ব দেন নেপথ্যে।

১৯৭২ সালে অস্ত্র ফেলে ফিরে এলেন ফরহাদ। নিজ নামে, মুখ খোলা রাজনীতিতে। বিয়ে করলেন রাশেদা খানমকে—ছাত্র ইউনিয়নের এক সময়ের নেত্রী। সিপিবিকে গড়ে তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৭৩ সালে হলেন সাধারণ সম্পাদক।

জেল-নিষেধাজ্ঞা আর অদম্য মন। জিয়া সরকার সিপিবি নিষিদ্ধ করে। ফরহাদ ফের জেলে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা, নির্যাতন, গুমের হুমকি—সব পেরিয়ে আবার মুক্তি। পরে এরশাদের সময়ও তাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তবু থামেননি তিনি।

ঐক্য গড়ার কারিগর। দল-মত ছাড়িয়ে ঐক্য গড়েন। শেখ হাসিনার ১৫ দল, খালেদা জিয়ার ৭ দল—দু’দিকেই অবদান তার। গণতন্ত্রের ৫ দফা প্রস্তাবনায় ছিলেন সামনে। যারা পথ খুঁজছিল, ফরহাদ তাদের কম্পাস ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর। মস্কোতে হঠাৎ হৃদরোগে মৃত্যু। বয়স তখন মাত্র ৪৯।

নেতা ছিলেন, কাঁধে হাত রাখার মতো। পরামর্শক ছিলেন, জ্ঞানে-ভালোবাসায়। কঠিন তত্ত্বে নয়, সহজ কথায় মানুষ জিতেছিলেন। কমরেড ফরহাদ ছিলেন বিপ্লবের স্থপতি। আবার ছিলেন একজন মানুষ, পরিপূর্ণ।

রাষ্ট্র হয়তো স্মরণ করে না। কিন্তু লাল পতাকায় আজও ভাসে তার ছায়া। কমরেড ফরহাদ আমাদের শেখান—স্বপ্ন দেখতে, লড়তে, ভালোবাসতে। বিপ্লবের স্বপ্নের মাঝেই তিনি বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top