মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২

ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যের

খ্রিস্টান পরিবারের শেষকৃত্য ঘিরে সহিংসতা, বাড়িতে আগুন ও গির্জা ভাঙচুর

নিজস্ব প্রতিবেদক | আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৮

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ছত্তিসগড় রাজ্যের কানকের জেলায় একটি খ্রিস্টান পরিবারের বাবার শেষকৃত্য প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দা ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকদিনের বিরোধের জেরে সহিংসতা দেখা দিলে একটি খ্রিস্টান পরিবারের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং গির্জা ও প্রার্থনাকক্ষ ভাঙচুর করা হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলার অন্তর্গত বাদেতেভদা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গিয়ে পুলিশের ওপর পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে এবং লাঠিসোঁটা হাতে একদল লোক বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতেই ধনুক-বাণ হাতে সশস্ত্র লোকজনকে প্রার্থনাকক্ষে তাণ্ডব চালাতে দেখা যায়।

দ্য ওয়্যার জানায়, গত ১৫ ডিসেম্বর বাদেতেভদা গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রধান রাজমান সালাম তার অসুস্থ বাবা চামরা রাম সালাম (৭০)–কে কানকের জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি মারা যান। রাজমান বহু বছর আগে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।

রাজমান সালাম জানান, তিনি প্রথমে স্থানীয় হিন্দু রীতি অনুযায়ী বাবার শেষকৃত্য করতে চেয়েছিলেন। তবে খ্রিস্টান হওয়ায় তাকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি।

পরদিন ১৬ ডিসেম্বর পরিবারটি নিজেদের ব্যক্তিগত জমিতে খ্রিস্টান রীতি অনুযায়ী শেষকৃত্যের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা আপত্তি জানালে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। পরে আরএসএস ও বজরং দলের মতো হিন্দুত্ববাদী সংগঠন জড়িত হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

একপর্যায়ে বিরোধ শারীরিক সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে রাজমানের পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কয়েকজন আহত হন।

রাজমান সালামের অভিযোগ, পুলিশ তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা নেয়নি। বরং তার পরিবারকে চাপ দিয়ে পিছু হটতে বলা হয়।

অন্যদিকে পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েকজন গ্রামবাসী চামরা রাম সালামের মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তাদের দাবি ছিল, শেষকৃত্য আদিবাসী প্রথা অনুযায়ী হয়নি এবং মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা প্রয়োজন।

গ্রামবাসীদের অভিযোগের পর ১৮ ডিসেম্বর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ওই দিনই মরদেহ তুলে ময়নাতদন্ত শুরু হয়।

এরপরই গ্রামে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। রাজমান সালামের অভিযোগ, প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মরদেহ সরিয়ে নেওয়ার পর খ্রিস্টানদের বাড়িঘর ও গির্জায় হামলা চালানো হয়।

এ ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top