সাংবাদিকতা পেশা নয়, এটা এক দায়বদ্ধতার নাম
সাংবাদিকতা শুধুই ক্যারিয়ার না, এটা এক সমাজচেতনার আন্দোলন
রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৭:৩০

সাংবাদিকতা পেশা নয়, এটা এক দায়বদ্ধতার নাম। গণমাধ্যম আসলে একটি সেবামূলক প্ল্যাটফর্ম। এটি কেবল অর্থ উপার্জনের মাধ্যম নয়। এর মূল চালিকাশক্তি হওয়া উচিত সেবার মানসিকতা। এক সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ছিল নীতিগত অঙ্গীকার। সত্য প্রকাশই ছিল সবচেয়ে বড় কাজ। এখন খবর নয়, বিবেক বিক্রি করছেন কেউ কেউ।
গণমাধ্যম প্যাশন এবং ভালো লাগার জায়গা। এর প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রয়োজন গভীর ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ। প্যাশন ছাড়া গণমাধ্যমে আসা মানে সত্যকে বিক্রি করা। এটি শিল্পীর মতো, যিনি কম পারিশ্রমিক পেলেও তার শিল্পকর্মে কোনো আপস করেন না। গণমাধ্যমের কর্মীরাও একইভাবে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আপসহীন হন। যদি তাদের মধ্যে সেবার মানসিকতা থাকে।
গণমাধ্যমকে যদি শুধু ব্যবসা হিসেবে দেখা হয়। তবে এর মৌলিক উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। সমাজ বঞ্চিত হবে তার সঠিক তথ্যের অধিকার থেকে। তাই, গণমাধ্যম শুধু অর্থ উপার্জনের স্থান নয়। এটি হলো সমাজের বিবেক এবং সেবার এক প্রতিচ্ছবি। এই মানসিকতা নিয়েই গণমাধ্যমকে এগিয়ে যেতে হবে।
গণমাধ্যমের শুরুটা ছিল একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। তখন গণমাধ্যম ছিল মানুষের কণ্ঠস্বর। বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানো ছিল তাদের সাহস। ছিল জনসেবার এক মহান ব্রত। তখন হয়তো কেউ ভাবেনি—এটা লাভজনক হবে কি না।
সময়ের সাথে সাথে সব বদলে গেছে। এখন গণমাধ্যম মানে ব্যবসা। মালিকের লাভ কমে গেলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। একটু লোকসান হলেই মুখ ভার। তাই প্রশ্ন হচ্ছে—গণমাধ্যম কী শুধুই এখন ইনকামের জায়গা। না, এটি প্রথমত সেবা করার প্ল্যাটফর্ম। একটি দায়িত্বের জায়গা।
এই জগতে আসতে হলে প্যাশন লাগবে। ভালোবাসা লাগবে সত্যের প্রতি। একটু লোকসানে পিছিয়ে গেলে, এ পথ আপনার নয়। কারণ, গণমাধ্যমে থাকতে হলে সাহস লাগে। যারা শুধু লাভের জন্য আসেন, তারা এই জায়গা নষ্ট করেন। তারা খবর বিক্রি করেন, সত্য নয়। তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যান, দায়িত্ব নেন না।
একজন চিত্রশিল্পী যেমন টাকার পরিমাণ দেখে তুলি চালান না। একজন সংবাদশিল্পীও তেমনি দায়বদ্ধ থাকেন আদর্শের কাছে। তাই এ পেশা বড় পুঁজি নয়, বড় মনের লোক চায়। গণমাধ্যম হলো সমাজের আয়না। যারা এই আয়নায় শুধুই বিজ্ঞাপন দেখাতে চান। তারা যেন আর না আসেন এই পবিত্র জায়গায়।
সত্যের জন্য লড়তে হলে সাহস লাগে। অন্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়াতে হলে আত্মত্যাগ লাগে। সত্যিকারের সাংবাদিকতা লাভ নয়, লড়াই শেখায়। যেখানে প্যাশন ও ভালোলাগা অপরিহার্য। কারণ, এটি নিছকই ব্যবসা নয়। এটি সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। মানুষের কণ্ঠস্বর হওয়ার অঙ্গীকার। লোকসান হলে হাল ছেড়ে দেবো।—এমন মানসিকতার মানুষ এই শিল্পে অযোগ্য। বড্ড বেমানান।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।