সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২

সরকারি উদ্যোগে গানম্যান পেলেন নাহিদ-হাসনাত-সারজিস-জারা

নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৮

সংগৃহীত

জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী যোদ্ধা, সমন্বয়ক, সম্ভাব্য সংসদ-সদস্য প্রার্থী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনের সম্মুখসারিতে থাকা কয়েকজনকে গানম্যান দেওয়া হয়েছে এবং তাদের ব্যক্তিগত অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে।

নিরাপত্তা পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। এছাড়া আরও কয়েকজন রাজনীতিক ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করেছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য গানম্যান চেয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। আবেদন পর্যালোচনা শেষে কয়েকজন রাজনীতিককে শিগগিরই গানম্যানসহ অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হতে পারে। এই তালিকায় রয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, বিএনপির মনোনীত সংসদ-সদস্য প্রার্থী তানভির আহমেদ রবিন (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী), জাফির তুহিন (পাবনা-৩), জেপি চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।

এদিকে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় শহীদ ওসমান হাদির পরিবারকেও বিশেষ নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। হাদির এক বোনকে গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের উচ্চপর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সরকারি সূত্র জানায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শক্তি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই জুলাই যোদ্ধারা নিয়মিত হুমকির মুখে রয়েছেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পলাতক নেতাকর্মীরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত ১২ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়। দেশে-বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। এই ঘটনার পর সরকার জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজনীয়তা নতুন করে উপলব্ধি করে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) বাহারুল আলম বলেন, যারা বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের একজন করে অস্ত্রধারী রক্ষী দেওয়া হয়েছে। তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের চলাফেরা ও নিরাপত্তা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতেই এসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে বহু জুলাই যোদ্ধা ও সংসদ-সদস্য প্রার্থী গানম্যান ও অস্ত্রের লাইসেন্স চাইলেও জনবল সংকটের কারণে সবাইকে গানম্যান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে অনেক আবেদনকারী শিক্ষার্থী হওয়ায় এবং তাদের ব্যক্তিগত যানবাহন না থাকায় নিরাপত্তা দেওয়া জটিল হয়ে উঠছে। তবে ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, যারা প্রকৃত নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন, তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার, রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন কমিশনারদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী গানম্যান, পুলিশি নজরদারি ও কর্মসূচিতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে।

 

এনএফ৭১/ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top