শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২

মিশরের বদরসিনে ‘সিজিনে ইউসুফ’: যেখানে বন্দি ছিলেন হজরত ইউসুফ (আঃ)

কায়রো থেকে বিশেষ প্রতিনিধি: | প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১৩

ছবি: সংগৃহীত

সাঈয়েদীনা মূসা, ইসা, সোয়াইব ও ইউসুফ (আঃ) সহ অসংখ্য নবী-রাসূলের স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমি মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে বদরসিন এলাকা। এখানেই অবস্থিত প্রাচীন ফারাও রাজা আখনাতুনের রাজপ্রাসাদ — কা’সর আজিজ মা’সর, যেখানে বড় হয়েছিলেন ইবনে কারিম, সাঈয়েদীনা ইউসুফ (আঃ) ও সাইদা জুলেখা। ঐতিহাসিকভাবে ধারণা করা হয়, এখানেই হজরত ইউসুফ (আঃ)-এর ওপর ওহি নাজিল হয়েছিল। সে সময়ের মিশরের একমাত্র মুসলিম ফেরাউন চতুর্থ আমিন খুতেন, তথা আখনাতুনের রাজপ্রাসাদ ছিল এটি।

আল কুরআনে বর্ণিত মোটা তাজা গরু ও শুকনা গমের ঐতিহাসিক স্বপ্নও হজরত ইউসুফ (আঃ) দেখেছিলেন এই রাজপ্রাসাদেই। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি যে খাদ্যগুদাম তৈরি করেছিলেন, তা আজও মিশরে ‘খাজিনা-ই-ইউসুফ’ নামে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আজ দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ‘সিজিনে ইউসুফ’— সেই ঐতিহাসিক কারাগার, যেখানে ইউসুফ (আঃ) বন্দি ছিলেন সাত বছরেরও বেশি সময়। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫ মিটার নিচে অবস্থিত এই কারাগারে নাজিল হয়েছিল ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ)-এর ওহি। মুসলিম বিশ্বে এটি পরিচিত ‘মুসতাজাবুল দাওয়া’ বা দোয়া কবুলের স্থান হিসেবে।

হজরত ইউসুফ (আঃ) ছিলেন মহান নবীদের উত্তরসূরি, উন্নত চরিত্রের অধিকারী ও সৌন্দর্যের প্রতীক এক নবী। বৈমাত্রেয় ভাইদের ষড়যন্ত্রে তাঁকে মিশরের সিতাদেল (বর্তমান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবীর দুর্গ)-এর একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়। পরে এক কাফেলা তাঁকে উদ্ধার করে ১৮ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। সেই কাফেলা ইউসুফ (আঃ)-কে মিশরের উজিরের কাছে বিক্রি করে দেয়, এবং উজিরের কাছেই তিনি বেড়ে ওঠেন।

যৌবনে পদার্পণের পর ইউসুফ (আঃ)-এর জীবনে ঘটে এক পরীক্ষার মুহূর্ত— উজিরের স্ত্রী জুলেখা তাঁকে কূপ্রস্তাব দেন। ইউসুফ (আঃ) তা প্রত্যাখ্যান করে দৌড় দিলে সাতটি বন্ধ দরজা একে একে খুলে যায়। তবে পেছন থেকে জুলেখা তাঁর জামা টেনে ধরলে তা ছিঁড়ে যায়, আর ঠিক তখনই দরজায় উপস্থিত হন উজির। পরে জুলেখার মিথ্যা অপবাদের কারণে ইউসুফ (আঃ)-কে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

ঐতিহাসিক দলিল অনুযায়ী, ইউসুফ (আঃ)-কে যে জেলখানায় বন্দি রাখা হয়েছিল, তার নাম ছিল ‘সিজনুল বদরসেন’। ফেরাউনের এই জেলখানাটি ছিল ভূমির ওপর নির্মিত একটি কারাগার, যেখানে বিচারাধীন আসামি ও সাধারণ অপরাধীদের রাখা হতো। সেই জেলখানাই আজ পৃথিবীর অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান— পবিত্র নবী ইউসুফ (আঃ)-এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বদরসিনে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top