বৃহঃস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে গুঞ্জন– সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে খালেদা জিয়া

স্টাফ ‍রিপোটার, ঢাকা | প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৪৫

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সাধারণ মানুষ—সবার মধ্যেই জোরালো আলোচনা চলছে, মা’কে দেখতে কবে দেশে ফিরবেন তাঁরেক রহমান?

দিনভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে খবর— দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর তাঁরেক রহমান নাকি দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে লন্ডন থেকে রওনা হয়েছেন। যদিও বিএনপির কোনো দায়িত্বশীল সূত্র আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তারপরও বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে— বুধবার সন্ধ্যায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। ওই ফ্লাইটের যাত্রী তালিকায় একজন ভিআইপি থাকার কথাও উল্লেখ আছে বলে জানা গেছে।

তারেক রহমানের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালেও তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সকাল থেকেই সেখানে বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।
এছাড়া সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার অবতরণের মহড়া পরিচালনা করবে বলেও জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ভিড় এড়াতে বিশেষ সুরক্ষায় তাকে হেলিকপ্টারযোগে হাসপাতালে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, তারেক রহমান দেশে ফিরছেন— তবে সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ কৌশলগত কারণে প্রকাশ করা হচ্ছে না।
দলীয় শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক মন্তব্য, গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে নীরব প্রস্তুতি এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা জোরদার হওয়া থেকে অনেকেই ধরে নিচ্ছেন— এই সপ্তাহেই ফিরতে পারেন তারেক রহমান।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,

“ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরায় কোনো বাধা দেখছি না।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন,

“তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন; তবে দিন-তারিখ এখনই বলতে পারছি না।”

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান,

“তারেক রহমান দেশে ফিরতে চাইলে কোনো বিধিনিষেধ নেই। এক দিনের মধ্যেই ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব।”

আইন উপদেষ্টাও নিশ্চিত করেছেন— দেশে ফেরায় কোনো আইনি বাধা নেই এবং তাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

দলীয় সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব হবে কি না— তা নির্ধারণ করবেন বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ড।
যদি তাঁরা সিদ্ধান্ত দেন যে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই— তাহলে তারেক রহমান দ্রুত দেশে ফিরবেন।
আর বিদেশে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে লন্ডন হবে প্রথম অগ্রাধিকার। সে ক্ষেত্রে তারেক রহমান লন্ডনেই অবস্থান করবেন।
দীর্ঘ বিমানযাত্রা অনুপযোগী বিবেচিত হলে বিকল্প হিসেবে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে— তখন তারেক রহমান সিঙ্গাপুরে মায়ের পাশে থাকবেন।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যুক্তরাজ্যের চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিম এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছে। টিমটির নেতৃত্বে রয়েছেন ড. রিচার্ড বিল।
তারা সিসিইউতে গিয়ে খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে চিকিৎসা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন।

এছাড়া চীনের চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দলও বুধবার রাত ১০টার পর হাসপাতালে এসে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে চিকিৎসা পরামর্শ দিয়েছে।

সরকার খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (VVIP)’ ঘোষণা করেছে। তাঁর নিরাপত্তায় বিশেষ সিকিউরিটি ফোর্স— এসএসএফ নিয়োগের প্রস্তুতিও চলছে।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্র, ফুসফুসসহ নানা জটিল রোগে ভুগছেন। ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে আসার পর তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে এবং তাকে ভর্তি করা হয়।

২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লন্ডনে যান তারেক রহমান। প্রায় ১৭ বছর ধরে সেখানে অবস্থান করছেন।
তার বিরুদ্ধে থাকা প্রায় শতাধিক মামলার মধ্যে পাঁচটিতে সাজা হলেও পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়ায় সব মামলায় তিনি খালাস পান।

 

সুত্র: নাগরিক টিভি



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top