রমজান ঘিরে হরেক রেওয়াজ দেশে দেশে

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০১

পবিত্র মাহে রমজান

বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। রোজাদারের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ইফতারের সময়। কারণ এই সময় মহান আল্লাহ দোয়া কবুল করে নেন।মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করাই রমজানের বার্তা। এই মাসের ধর্মীয়বিধান সব মুসলমানের জন্যই অভিন্ন। তবে এই মাস ঘিরে দেশে দেশে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রেওয়াজ। চলুন, বিশ্বজুড়ে এমন কিছু রেওয়াজের সঙ্গে পরিচিত হই। জেনে নিই, পৃথিবীজুড়ে মুসলিমরা কীভাবে রমজান পালন করে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতে রমজানের উৎসব শুরু হয় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই। বাহারি পোশাক পরে দলে দলে শিশুরা নেমে আসে সড়কে। রমজানকে স্বাগত জানাতে সংগ্রহ করে মিষ্টান্ন। শিশুদের অংশগ্রহণে এ রেওয়াজের নাম হক আল লায়লা।

ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি হলো রমজান শুরুর আগে নিজের শরীর-মনকে পরিশুদ্ধ করা। স্থানীয় মানুষ পুকুরে অনেকক্ষণ ধরে গোসল করে নেন। শরীরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে নিজেকে পবিত্র করেন। বহু বছর ধরে চলা এ প্রথার নাম পাদুসান।

মিশরীয়রা আত্মীয়স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করতে পছন্দ করেন। বিশ্বজুড়ে রমজানে যদি কোনো রঙিন, চমৎকার প্রথা থাকে, তার একটি হলো ফানাস। এটি উদ্‌যাপিত হয় প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিসরে। রমজানে ঘরবাড়ি, সড়ক আলোকিত করা হয় রঙিন লন্ঠন জ্বালিয়ে। কিছু নিঃস্বার্থ মানুষ সাহ্‌রির সময় রোজাদারদের ডেকে তোলেন। কোথাও হালকা ড্রাম বাজিয়ে, কোথাও ভক্তিমূলক গানের মধ্য দিয়ে।

এ প্রথা চালু আছে মরক্কোতেও। সেখানে এই স্বেচ্ছাসেবকেরা পরিচিত নাফার নামে। ঐতিহ্যবাহী গান্দোরা পরে, পায়ে চপ্পল গলিয়ে নাফাররা বেরিয়ে পড়েন রোজাদারদের ঘুম ভাঙাতে। তাঁদের সুমধুর ধর্মীয় গানের সুর ছড়িয়ে পড়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে।

পবিত্র রমজানে ইরাকে মেইবেস নামের একটি খেলার প্রচলন আছে, যা শুরু হয় ইফতারের পরে। দুই দলে ভাগ হয়ে খেলাটি চলে। প্রতিটি দলে ৪০ থেকে ২৫০ জন পর্যন্ত অংশ নেন। এটি হলো আংটি লুকানো খেলা।

কামান দেগে ইফতারের সময় ঘোষণার প্রথা আরবের বহু দেশে প্রচলিত রয়েছে। মিদফা নামে লেবাননে এ ঐতিহ্য চলছে ২০০ বছর ধরে। তবে এর উৎপত্তি মিসর থেকে।

ভারত মুসলিম প্রধান দেশ না হলেও এই দেশে অনেক মুসলিমের বসবাস। সাধারণত এই দেশের লোকজন তাদের মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করেন। তাছাড়া এখানকার একেক রাজ্যে ইফতারির রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা।

ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্ম প্রসারিত হওয়ার পর বাংলাদেশে মুসলমানদের রীতি-রেওয়াজ প্রতিষ্ঠিত হয় মোগল আমলে। সুবে বাংলার রাজধানী হিসেবে ঢাকা ছিল এর কেন্দ্রভূমি। গত চার শ বছরের বেশি ইসলামী চর্চা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

ব্রিটিশ আমল থেকে সরকারিভাবে তিনবার সাইরেন বাজিয়ে সাহরির শুরু, মধ্যম ও শেষ সময় ঘোষণা করা হতো। এরআগে মোগল আমল থেকে ঢাকার মহল্লা পঞ্চায়েতের গোরেদরা (ঘোষক) স্থানীয় উর্দু ও বাংলা ভাষায় সাহরির সময় রোজাদারদের জাগিয়ে দিত।

তাদের বোল ছিল এ রকম—‘উঠঠো রোজদারও সেহেরি খা লও, রাত তিন বাজগিয়া।’ সাহরিতে ঢাকাইয়াদের মূল খাওয়া থাকত দুধ, ভাত, কলা ও আম। ঢাকাইয়ারা সাহরির শেষদিকে খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে ফের ঘুমাতে যেত। এখন মসজিদের মাইকে সাহরির ঘোষণা চালু হওয়ায় গোরেদদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top