তৌকির আর ফিরবে না—স্বপ্নের উড়ালেই থেমে গেল জীবন
আজিজুল ইসলাম | প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২৫, ১৩:০৭

আজকের দিনটা শুধু আরেকটা দুর্ঘটনার খবর নয়—এটা একজন সন্তান হারানোর দিন। একজন ভাই হারানোর দিন। একজন স্বপ্নভঙ্গের দিন। তার নাম ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এক তরুণ বৈমানিক। প্রথমবারের মতো একা উড়াল দিচ্ছিলেন প্রশিক্ষণ বিমানে। কিন্তু সেই উড়ালই হয়ে উঠলো তার জীবনের শেষ ভ্রমণ।
সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন, মাত্র ১২ মিনিট পর—১টা ১৮ মিনিটে বিধ্বস্ত হলো তার বিমান, ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনের ওপর। কিন্তু সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত তার মা-বাবা, বোন—কেউ জানতেন না, তৌকির আর বেঁচে নেই। তারা তখনও বিশ্বাস করছিলেন—সাগর হয়তো হাসপাতালে, হয়তো কোনো ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এমন বিশ্বাস নিয়েই তারা রাজশাহী থেকে হেলিকপ্টারে রওনা হন ঢাকার উদ্দেশ্যে।
তৌকিরের বাসা ছিল রাজশাহীর উপশহর এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে। বাসার মালিক বলেন—এই প্রথমবার একা বিমান চালাবে বলে তৌকিরের পরিবার আনন্দে ভাসছিল। কিন্তু দুপুরের পর যখন বিধ্বস্ত হওয়ার খবর এলো, তখনও পরিবারকে বলা হলো—তৌকির আহত, তবে জীবিত।
সেই আশাই ভেঙে গেল সিএমএইচ হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তৌকিরের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে। তিনি পড়েছেন রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুলে, পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজে। বছরখানেক আগে বিয়ে করেছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকাকে।
তার বাবা তহুরুল ইসলাম একজন আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী। সেই বাবা আজ ছেলের লাশ নিতে ছুটছেন হেলিকপ্টারে, বুকে একটাই আশা—হয়তো এখনো সাগর বেঁচে আছে। তৌকির ইসলাম সাগর শুধু একজন বৈমানিক ছিলেন না—তিনি ছিলেন এক পরিবারের গর্ব, এক জাতির সম্ভাবনা।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।