দোহায় ইসরায়েলি হামলা: ৭২ ঘণ্টায় ছয় দেশে আগ্রাসন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৫

কাতারের রাজধানী দোহায় ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় ওয়েস্ট বে লাগন এলাকার একটি আবাসিক ভবনে এ হামলা হয়। এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল হায়ার ছেলে, তিনজন দেহরক্ষী এবং কাতারের নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা। তবে আলোচনায় অংশ নেওয়া শীর্ষ নেতারা হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, এ সময় গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রস্তাব নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনা চলছিল।
৭২ ঘণ্টায় ছয় দেশে হামলা
কাতারে হামলাটি ইসরায়েলের বৃহৎ সামরিক পরিকল্পনার অংশ। মাত্র ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে তেল আবিব হামলা চালিয়েছে ছয়টি দেশে—ফিলিস্তিন, সিরিয়া, তিউনিশিয়া, লেবানন, কাতার ও ইয়েমেনে।
গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এসব হামলায় শুধু গাজাতেই ১৫০ জন নিহত এবং ৫৪০ জন আহত হন। গাজার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের মধ্যে ৬৭ জন মারা যান। ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন আরও ১৪ জন। দুর্ভোগে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শিশুসহ ছয়জন। মঙ্গলবারের হামলায় আরও ৮৩ জন নিহত এবং ২২৩ জন আহত হয়েছেন।
লেবাননে আগ্রাসন
সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে লেবানের পূর্বাঞ্চলীয় বেক্কা ও হারমেল জেলায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে পাঁচজন নিহত হন। সেনাবাহিনী দাবি করেছে, লক্ষ্যবস্তু ছিল হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগার ও সামরিক ঘাঁটি। যদিও বিষয়টি স্বাধীনভাবে যাচাই সম্ভব হয়নি।
এরপর মঙ্গলবার বৈরুতের দক্ষিণে বারজাতেও হামলা চালানো হয়। এতে হিজবুল্লাহর এক যোদ্ধা নিহত হন। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে।
সিরিয়ায় হামলা
সোমবার রাতে সিরিয়ার একাধিক এলাকায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। লক্ষ্যবস্তু ছিল সিরিয়ার বিমানঘাঁটি, ঘরবাড়ি ও সামরিক ব্যারাক। যদিও কোনো হতাহতের খবর মেলেনি। সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ হামলাকে "সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন" হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ইসরায়েল সিরিয়ায় শতাধিক হামলা চালিয়েছে। এতে ১৩৫টি স্থাপনা ধ্বংস ও ৬১ জন নিহত হয়েছেন।
তিউনিশিয়া উপকূলে আঘাত
গাজাগামী "দ্য গ্লোবার সমুদ ফ্লোটিলা" জাহাজ তিউনিশিয়ার উপকূলে ইসরায়েলি ড্রোন হামলার শিকার হয়। এতে ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
ইয়েমেনে হামলা
বুধবার ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এর আগে গত ৬ মে সানা বিমানবন্দরে আঘাত হেনেছিল তারা। ২৮ আগস্ট হুতি সরকারের এক বৈঠকেও হামলা চালানো হয়, যেখানে হুতি প্রধানমন্ত্রী আল-রাহাওয়িসহ কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা নিহত হন।
মৃত্যুর মিছিল
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হয়। এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪ হাজার ৬৫৬ জনে। অনাহারে মারা গেছেন অন্তত ৪০৪ জন। হাজারো মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
বিশ্লেষণ
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের এই ধারাবাহিক হামলা নতুন এক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। মুসলিম বিশ্বে ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়ার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।