শেখ হাসিনা পালানোর আগে কী ঘটেছিল গণভবনে
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৫, ১৭:০৫

বহু রক্তপাত আর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে ক্ষমতা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। শেষ মুহূর্তেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল তার। এজন্য গেল ৪ আগস্ট সকাল থেকে রাষ্ট্রের সব বাহিনীর প্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাপ দিতে থাকেন তিনি। পরিস্থিতি নিজের নিয়ন্ত্রণে বাইরে গেলেও মানতে নারাজ ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। একপর্যায়ে পদত্যাগ করতে তাকে বোঝাতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। এমনকি ৫ আগস্ট গণভবনে শেখ হাসিনার পা ধরেছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, দেশ ছাড়ার আগে ৫ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের চাপ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। শেষ সময়েও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মাধ্যমে গদি টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। পরিস্থিতি একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেটিও মানতে চাচ্ছিলেন না। পরে পরিবারের সদস্যদের কথায় তড়িঘড়ি পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, ৫ আগস্ট সকাল গণভবনে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে সে সময়কার আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ওরা ভালো কাজ করছে, সেনাবাহিনী পারবে না কেন? তখন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, পরিস্থিতি যে পর্যায় গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এমন কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব না। অস্ত্র–গোলাবারুদ আর অবশিষ্ট নেই, বাহিনীও ক্লান্ত হয়ে গেছে।
এরপর সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন তিনি রেগে যান এবং বলেন, তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো এবং গণভবনে কবর দিয়ে দাও।
ওই বৈঠক থেকে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে গণভবনের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন এবং তাকে আবারও পদত্যাগ করতে অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে ছোট বোন শেখ রেহানাও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রাজি না হওয়ায় শেখ রেহানা একপর্যায়ে শেখ হাসিনার পা জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছিলেন না। পরে হাসিনার ছেলে জয়ের সঙ্গে কথা বলেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। রোববার (২৫ মে) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব কথা তুলে ধরেছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সামনে লিখিতভাবে এসব পড়ে শোনান তিনি।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।