মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২

অ্যান্ড্রয়েড ফোনই দিচ্ছে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা,তবে কিভাবে?

নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১০

সংগৃহীত

তিন বছর আগে, ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার বে এরিয়ায় আঘাত হানা ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্পটি তীব্র ছিল না, ক্ষয়ক্ষতিও ছিল সীমিত। তবে এই ভূমিকম্প একটি বড় প্রযুক্তিগত ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসে—কম্পন শুরুর আগেই অনেক মানুষ তাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন।

এরপর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫.২ মাত্রার আরেক ভূমিকম্পের ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতা হয়। অনেকেই জানান, তারা কম্পন অনুভবের অন্তত ৩০ সেকেন্ড আগে নোটিফিকেশন পেয়েছিলেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—এই ভূমিকম্পগুলো প্রথম শনাক্ত করেছিল ব্যবহারকারীদের নিজের ফোনই।

গুগল বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ (USGS) ও ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে অ্যান্ড্রয়েড-নির্ভর একটি ‘আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেম’ তৈরি করছে। লক্ষ্য—ভূমিকম্পের আগেই কয়েক সেকেন্ড সময় হাতে এনে ব্যবহারকারীকে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ দেওয়া।

কীভাবে কাজ করে এই প্রযুক্তি?

এই সিস্টেম দুটি উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে—

১. যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপিত হাজারো সিসমোমিটার

২. বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা অ্যান্ড্রয়েড ফোন

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে থাকা উচ্চ সংবেদনশীল অ্যাক্সেলারোমিটার সাধারণত চলাফেরার তথ্য দিতে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু একই সেন্সর ভূমিকম্পের প্রাথমিক কম্পনও শনাক্ত করতে সক্ষম—একটি ক্ষুদ্র সিসমোমিটারের মতোই।

যখন কোনো ফোন প্রথম কম্পন শনাক্ত করে, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য পাঠায় গুগলের সার্ভারে। এরপর তাদের সিস্টেম একই এলাকার হাজারো ফোনের ডেটা মিলিয়ে দেখে। একই ধরনের সিগন্যাল আসলে গুগল নিশ্চিত হয় যে এটি ভূমিকম্প। সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকার সব অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়—যা পুরো প্রক্রিয়ায় কয়েক সেকেন্ডের বেশি সময় নেয় না।

গুগলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মার্ক স্টোগাইটিস বলেন, “এটি মূলত আলোর গতিবেগ আর ভূমিকম্পের গতিবেগের মধ্যে একটি দৌড়। আমাদের সুবিধা হচ্ছে—রেডিও সিগন্যাল ভূকম্পনের চেয়ে অনেক দ্রুত পৌঁছে যায়।”

সতর্কবার্তায় সাধারণত বলা হয়—“Drop, Cover & Hold”—অর্থাৎ দ্রুত নিচে ঝুঁকে আশ্রয় নিন এবং নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন।

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১৮০০ কোটি মোবাইল ডিভাইস রয়েছে, যার মধ্যে ৩৫–৪০ কোটি অ্যান্ড্রয়েড ফোন গুগলের এই আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিস্টেমের আওতায়। এটি ইতোমধ্যেই ৯০টিরও বেশি দেশে চালু।

সীমাবদ্ধতাও আছে

যেখানে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সংখ্যা কম, সেখানে ডেটা সংগ্রহ দুর্বল হয়।

সমুদ্রে সৃষ্ট ভূমিকম্প শনাক্ত করতেও সিস্টেমটি খুব কার্যকর নয়।

আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া গেলেও ভূমিকম্প কখন হবে—এটি এখনও বিজ্ঞানীদের পক্ষে পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব।

কীভাবে চালু করবেন আর্থকোয়েক অ্যালার্ট?

১. ফোনের Settings খুলুন

২. যান Safety & Emergency অপশনে

৩. সেখান থেকে Earthquake Alerts চালু করুন

কিছু শর্তও রয়েছে

ফোনের Location অন রাখতে হবে

ফোনকে স্থিতিশীল স্থানে (যেমন টেবিলের ওপর) রাখতে হবে

চার্জার লাগানো থাকতে হবে, যাতে সেন্সরগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে

একই এলাকার বহু ফোন থেকে কম্পনের তথ্য পেলে গুগলের সিস্টেম তা বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্য ভূমিকম্প শনাক্ত করতে পারে এবং মুহূর্তের মধ্যে সকল ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে দেয়।

 

এনএফ৭১/ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top