বুধবার, ৭ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর গুলি, নিহত অন্তত ২৬, কিভাবে হামলা হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:১৯

ছবি: সংগৃহীত

গেল মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) স্থানীয় সময় আড়াইটা। জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট পেহেলগাম। মনোরম এই এলাকাটিকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলা হয়। সেখানেই এক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। সেই হামলায় নিহত ২ বিদেশিসহ ২৬ জন পর্যটক। আহত হয়েছেন আরও ১২ জন। সেনাবাহিনীর ছদ্মবেশে পর্যটকদের ওপর অর্তকিত এ হামলা চালায় হামলাকারীরা।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, পেহেলগামের বাইসারান উপত্যকার উপরের চারণভূমিতে গুলির শব্দ শোনা গেছে। এই এলাকায় শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে বা ঘোড়ায় চড়ে পৌঁছানো যায়। ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত হামলা।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, গুলি করা হয়েছিল কাছ থেকে, ফলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় এবং একাধিক ব্যক্তি আহত হন। ঘটনাস্থলের হৃদয়বিদারক দৃশ্যগুলোতে দেখা যায় স্থানীয়রা আহতদের সাহায্য করতে ছুটে আসে এবং মহিলারা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।

পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক বেঁচে যাওয়া নারী। হামলায় স্বামীকে হারানো এই নারী জানান, ‘আমরা ভেলপুরি খাচ্ছিলাম... হঠাৎ সন্ত্রাসীরা এসে আমার স্বামীকে গুলি করল। তারা বলল, সে মুসলমান নয়।’

বেঁচে যাওয়া ওই নারীর কথায়, হামলাকারীরা পরিচয় যাচাই করে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে হামলা চালিয়েছে। শোক ও আতঙ্কে তিনি জানান, চোখের সামনে স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে ধারণকৃত ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী অঝোরে কাঁদছেন ও সাহায্যের জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। বারবার বলছেন, ‘দয়া করে, আমার স্বামীকে বাঁচান।’ তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন দুজন পুরুষ।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, গুরুতর আহত একজনকে সাহায্য করতে ছুটে আসছেন এক নারী। তাড়াহুড়ো করে তিনি বলছেন, ‘স্যার, দয়া করে, দয়া করে সাহায্য পাঠান।’

এই হামলাটি এমন সময়ে ঘটেছে যখন কাশ্মীর উপত্যকায় পর্যটন মৌসুম তুঙ্গে। সারা ভারতে ‘আমারনাথ যাত্রা’র রেজিস্ট্রেশন চলছে। ৩৮ দিনব্যাপী এই তীর্থযাত্রা শুরু হবে ৩ জুলাই থেকে। ‘আমারনাথ যাত্রা’র একটি রুট হল ৪৮ কিমি দীর্ঘ পেহেলগাম রুট।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের লড়াই করার সংকল্প অটুট এবং শক্তিশালী হবে। টেলিফোনে এক কথোপকথনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে হামলার স্থান পরিদর্শন করতে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

ভারত প্রায়ই কাশ্মীরে এই ধরনের হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, তারা কেবল কাশ্মীরের আত্মনিয়ন্ত্রণ সংগ্রামকে নৈতিকভাবে সমর্থন করে।

সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি ঘটেছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামায়। তখন বিদ্রোহীরা বিস্ফোরকে ভর্তি একটি গাড়ি নিয়ে পুলিশের গাড়িবহরে হামলা চালায়। ওই হামলায় ৪০ জন নিহত ও অন্তত ৩৫ জন আহত হয়। সর্বশেষ সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাটি হয়েছিল ২০০০ সালের মার্চ মাসে। তখন ৩৬ জন ভারতীয় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top