• ** জাতীয় ** আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা ** আবারও তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি ** চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে দুই নারীর মৃত্যু ** ইউআইইউ ক্যাম্পাসে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি’ নিয়ে তোলপাড় সারাদেশ ** সিলেটে মসজিদে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু ** নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু ** সব ধরনের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন : https://www.newsflash71.com ** সব ধরনের ভিডিও দেখতে ভিজিট করুন : youtube.com/newsflash71 ** লাইক দিন নিউজফ্ল্যাশের ফেসবুক পেইজে : fb/newsflash71bd **

পর্ব-১

প্রেমময় বিষ

নিজস্ব প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৮:৫৭

প্রেমময় বিষ

প্রেমময় বিষ
পর্ব-১
লেখক: মাহিমা রেহমান

 

পরপর কয়টা থাপ্পড় গালে পড়াতেই অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় মানুষটার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে নিলাম।এই মানুষটি কী কোনদিনও আমার অনুভূতি গুলো বুঝবে না? কথাটা মাথায় আসতেই মানুটার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলতে লাগলাম,

-- রায়ায ভাই আমি আপনাকে সত্যিই খুব ভালোবাসি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না..
কথাটা আর শেষ করতে পারলাম না তার পূর্বেই আগের চেয়ে বেশ জোরে আরো কয়েকটি থাপ্পড় পড়লো আমার গালে, এবার আর সইতে পারলাম না মাথা নিচু করে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলাম।

রয়ায ভাই এবার অনেকটা রেগে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বলতে লাগলেন,
-- বয়স দেখেছিস নিজের? আমি তোর থেকে গুনে গুনে তেরো বছরের বড়। লজ্জা করলো না নিজের থেকে বয়সে এতো বড় ছেলেকে প্রেমের প্রপোজাল দিতে?তাছাড়া সম্পর্কে আমি তোর বড় ভাই হই তা কী ভুলে গেছিস নাকি গুলে খেয়ে ফেলেছিস?আর তোর কি যোগ্যতা আছে আমার ভালোবাসা পাওয়ার ? না আছে রূপ আর না গুন! কিছুই নেই! তাহলে কোন সাহসে আমার সামনে এসে দাঁড়ালি? আগে নিজেকে আয়নায় দেখ,তারপর আমার কাছে প্রেম নিবেদন করতে আসবি।

কথাটা বলেই রায়ায ভাই হনহন করে চলে গেল।
রায়ায ভাই আমার বড় চাচ্চুর ছেলে।ভালোবাসা কী আমিতো এই মানুষটাকে দেখেই বুঝেছি! কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে তাই মাটিতে বসে কাঁদতে লাগলাম যেই মানুষটাকে আমি এতো ভালোবাসি সেই ভালোবাসার মানুষটা আজ আমাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে গেল। উনার বলা অপমান জনক কথাগুলো মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে ।

যখন থেকে বুঝে ওঠতে শিখেছি ভালোবাসা কী? তখন থেকেই এই মানুষটার প্রতি আমার মনে এক অন্যরকম অনুভুতি জন্মে ছিল।

"যখন ক্লাস সবে মাত্র সেভেনে পড়ি তখন একদিন আমি বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসায় ফিরি।সেদিন বাড়িতে কেউ ছিল না হঠাৎ করে আমার দাদু অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় সকলে তড়িঘড়ি করে গ্রামের বাড়ি চলে যায়।আমি স্কুলে থাকায় আমাকে আর নিতে পারেনি। তবে বাসায় থেকে যায় শুধুমাত্র একজন কাজের মেয়ে আর ভাইয়া।ভাইয়া কেন যায়নি তা আজই জানি যা।সেদিন আমার প্রথম পিরিয়ড হয়েছিল, এতো কই বুঝতাম? তাই কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বাসায় ফিরছিলাম। কারণ যখন বাসায় ফিরছিলাম তখনই রাস্তার পাশে বসে থাকা কিছু ছেলে খুব নোংরা নোংরা কথা শুনিয়েছিল। তাই কাঁদতে কাঁদতে তাড়াতাড়ি দৌড়ে বাসায় আসি।এসে যখন দেখি বাসায় কেউ নেই তখন আমি আরো ভয় পেয়ে যাই আর জোরে জোরে কাঁদতে থাকি। সেদিন এই রায়ায নামক মানুষটাই আমাকে সামলেছে।আমাকে বুঝিয়েছিল এসব নরমাল ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।সেদিন এই মানুষটাই ছিল আমার একমাত্র ভরসা"

সেদিন থেকেই এই মানুষটাকে আমি চোখে হারাই।ধীরেধীরে বড় হতে থাকি আর রায়ায নামক মানুষটার প্রতি আমার মনের অনুভূতি গুলো আরো গভীর থেকে গভীরে হতে থাকে।

দেখতে দেখতে সবে পনেরোতে পা দেই।আর তাই যেন আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।বুঝতে পারি ভালোবাসা নামক রোগে আমি আক্রান্ত আর এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা হচ্ছে রায়ায।দিন যত যেতে থাকে আমার নির্ঘুম রাতের সংখ্যা ততই বাড়তে থাকে।আমি যেন পাগল হয়ে উঠছিলাম রায়ায নামক মানুষটাকে নিজের করে পেতে।

তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে করেই হোক আজকেই নিজের মনের কথা ভাইয়াকে জানাবোই।তাই ভাইয়ার প্রিয় রঙের শাড়ি চুড়ি নিজের গায়ে জড়িয়ে নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে ভাইয়ার কলেজে এস হাজির হয়েছিলাম। ভাইয়া এবার মাস্টার্স করছে পাশাপাশি বড় চাচ্চুর বিজনেস ও সামলাচ্ছে।আবার নাকি কলেজে রাজনীতি করে বেড়ায় শুনেছি।ছেলেটার অনেক গুণ আছে বলতে হবে তার উপর দেখতে যা হ্যান্ডসাম ভাবতেই নিজের উপর প্রাউড হচ্ছে। কী চয়েস আমার।কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ভাইয়াকে খুঁজতে লাগলাম কিন্তু কোথাও খুঁজে না পেয়ে সামনে একটা ছেলেকে দেখে জিজ্ঞেস করেছিলাম,

-- রায়ায আরহান কে দেখেছেন?

ছেলেটা আমাকে একপলক দেখে নিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিজের মুখে নিয়ে বলতে লাগলেন,

-- আমার সাথে এসো।

ছেলেটার এমন আজব ব্যবহার দেখে প্রথমে আমি বেশ খানিকটা অবাক হয়েছিলাম।পরে আর আমলে নিলাম না। আমার কাজ হচ্ছে রায়ায ভাইয়াকে নিয়ে এই ছেলে যা খুশি করুক তাতে আমার কি? এসব ভাবতে ভাবতে উনার পিছু পিছু যাচ্ছিলাম।কিছুক্ষন পর ভাইয়াকে পেয়েও গেলাম।
দেখলাম ভাইয়া একটা মেয়ের সাথে খুব হেসে হেসে কথা বলছে আর মেয়েরা মনে হয় পারলে এখনই ভাইয়ার কোলে উঠে যেত।এসব দেখেই গা টা জ্বলে গেল।তবে নিজের রাগটাকে দমিয়ে নিলাম।কারণ আজ আমার জন্য খুব বিশেষ একটা দিন।

ছেলেটা ভাইয়াকে ডাক দিলে ভাইয়া এদিক ফিরে তাকালো।আমি ধীরে ধীরে ভাইয়ার দিকে এগোতে লাগলাম।ভাইয়া আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি উনার সামনে হাঁটুমুড়ে বসে নিজের মনে লুকিয়ে রাখা এতদিনের ভালোবাসা গুলো আজ উনার সামনে ফুলের ন্যায় তুলে ধরি।আর সাথে সাথে কয়েকটি থাপ্পড় আমার গালে এসে পড়ে।
______
সেই তখন থেকে নিচে বসে কেঁদেই চলছি।আশেপাশের কোনকিছুই আপাদত আমার মাথায় নেই।আমি যখন নিজের ভাঙ্গা মনটাকে শান্তু করতে ব্যস্ত তখনই একটা হাত আমার দিকে একটা টিস্যু এগিয়ে দেয়, আর বলতে লাগে,

-- চোখের পানি মুছে নাও।কেঁদে কোন লাভ নেই। কাঁদলেই যদি রায়াযকে পাওয়া যেত তাহলে শতশত মেয়ে তার পায়ের কাছে বসে প্রতিনিয়ত কেঁদেই যেত।

উনার কথা শুনে আমি ওনার দিকে চোখ তুলে তাকালাম আর সাথে সাথেই উনি আমাকে টেনে উপরে তুলে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নিজের হাতে আমার চোখের জলটুকু মুছে দিল। উনার এহেম কাজে আমিতো অবাকের শেষ পর্যায় পৌঁছে গেলাম।ঠিক তখনই একটা মেয়ে এসে আমাকে বলতে লাগলো,

-- সো সেড, ইউ পুর গার্ল।যেখানে এতো এত মেয়ে ওকে চেয়েও পায় না সেখানে তোমার মত পুঁচকে মেয়ে এসেছো ওর ভালোবাসা পেতে? সো সেড বাট তুমি ওকে কখনোই পাবেনা কারণ তোমার মত ক্ষ্যাত আর আনকালচারাল মেয়েকে দিয়ে ও ওর জুতাও মুছে না।

কথাটা বলেই মেয়েটা চলে গেল।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলাম প্রায় অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর মজা নিচ্ছে।

এসব আর নিতে পারছি না তাই উল্টো ঘুরে হাঁটা দিলাম নিজ গন্তব্যে।
তখনই পিছন থেকে একটা বলিষ্ঠ হাত আমার হাত আঁকড়ে ধরলো। আমি হাতের মালিকের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তখনকার সেই ছেলেটি।তাই আমি তাকে বললাম,

-- কী করছেন কী?আমার হাত ছাড়ুন।আর কে আপনি?

আমার কথার পিঠে উনি শুধু মুচকি হাসলেন,,
একটা বাইকের সামনে এসে উনি আমার হাত ছেড়ে দিলেন আর বলতে লাগলেন,

-- তাড়াতাড়ি উঠে বস আমি তোমাকে তোমার বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসি।
উনার কথা শুনে আমি অনেকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

-- আপনি কেন আমাকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসবেন?আর আপনি কী আমার বাড়ি চিনেন নাকি না আমাকে চিনেন কোনটা?

আমার কথা শুনে উনি হালকা হেসে বলতে লাগলেন,

-- আমি তোমাকে চিনি সেই ছোটবেলা থেকেই বেলা রাণী। বলেই আমার গাল দুটো টেনে দিলেন।
আমি অনেকটা অবাক হচ্ছি, উনি দেখছি আমার নামও জানে।আরো কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো তার আগেই উনি অনেক তাড়া দিয়ে বলতে লাগলেন,

-- তাড়াতাড়ি উঠে পড়। নিশ্চয়ই তোমায় দেরি হচ্ছে?
আমিও আর কথা বাড়ালাম না এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই।উঠে বসলাম উনার পিছনে,আমি বসার সাথে সাথে উনি বাইক স্টার্ট দিলেন।
_____
আকাশে কেমন মেঘ করেছে। মনে হচ্ছে ঝড় হবে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম আকাশটার ও বুঝি আমার মত মন খারাপ? তাই হয়তো বৃষ্টির মাধ্যমে এভাবে নিজের অভিমান গুলো ঝরাতে চাইছে?আমার ও যেমন কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে জল হয়ে চোখে ঝরতে চাইছে।তবে অনেক কষ্ট নিজের অভিমান গুলো কে চেপে রাখলাম।

হঠাৎ করে সামনের মানুষটা বলতে লাগলো',

-- নিজের কষ্ট গুলোকে আটকা না রেখে ঝরতে দাও‌।এতে মন হালকা হবে।

কথাটা বলতে দেরি আমার কাঁদতে দেরি নেই।মুখ চেপে ঘরে কাঁদতে লাগলাম।
মাঝরাস্তায় বৃষ্টি নেমে গেল।তাই বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে আমি প্রায় ভিজে গেলাম। ভাইয়াটা ও অনেকটা ভিজে গেছে তাই তাকে বলতে লাগলাম,

-- ভাইয়া আপনিতো অনেকটা ভিজে গেছেন তাই আমার সাথে আমাদের বাড়ির ভিতরে আসুন প্লিজ।তাছাড়া আপনি নাকি আমার পূর্ব পরিচিত? তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের পরিবারের সকল সদস্যই আপনার চেনা?আসুন না ভাইয়া ভিতরে আসুন এসে সকলের সাথে দেখা করে যান।

কথাটা বলতে দেরি ভাইয়া আমাকে তাড়া দিয়ে বললেন,

-- আজ নয় বেলা রাণী, অন্য একদিন অবশ্যই আসবো।

কথাটা বলে উনি সাথে সাথে প্রস্থান করলেন আর আমি উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে সাথে সাথে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লাম।

আমাকে ভেজা অবস্থায় দেখে বড়মা তাড়াতাড়ি দৌড়ে আসলেন আর যথিকে তাড়াতাড়ি বলেলন একটা টাওয়াল নিয়ে আসতে। যথি আমাদের বাড়িতে কাজ করে।

বড়মা উত্তেজিত হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন,

--কিরে কী হয়েছে? এরকম করে ভিজে গেলি কেমন করে?আর কোথায় গিয়েছিলি?

-- বড়মা আমার খুব ক্লান্ত লাগছে।আমাকে আগে একটু বসতে দেবে?
কথাটা বলার সাথে সাথে বড়মা আমাকে সোফায় এনে বসিয়ে দিলেন।আমি নিজেকে একটু রিল্যাক্স করতে লাগলাম। যথি টাওয়ালটা এনে বড়মার হাতে দিতেই উনি আমার মাথা মুছে দিতে লাগলেন।কিছুক্ষন পর আমার আম্মুও এসে হাজির হলো আর এসেই জিজ্ঞেস করতে লাগলো,

-- কিরে এমন করে ভিজলি কী করে? আর এতো সেজে কোথায় গিয়েছিলি?
আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম আর সকলকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলাম,

-- আমি এখন আমার রুমে যাচ্ছি। আমি খুব ক্লান্ত, একটু রেস্ট করে নেই এরপর তোমাদের সকল কথার জবাব দেব।

কথাটা বলেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম।রুমে গিয়ে দরজা আটকে হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদতে লাগলাম।কিছুক্ষন কেঁদে নিজের মনকে হাল্কা করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম চেঞ্জ করতে।চেঞ্জ করে এসে শুয়ে পড়লাম।অতঃপর ঘুমের দেশে পাড়ি জমালাম।

যখন ঘুম ভাঙলো তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল।

তাই হাতমুখ ধুয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামলাম।

নিচে গিয়ে দেখি টিনা- মিনা খেলছে।"আমাদের যৌথ পরিবার। আমার আব্বুরা তিন ভাই।রায়ায ভাইয়ার বাবা হচ্ছে সবার বড় এরপর আমার আব্বু একপর আমার ছোট চাচ্চু আর তাদের একমাত্র আদরের ছোট বোন যিনি আপাদত শ্বশুর বাড়ি আর আমাদের দাদি সকলে মিলে আমরা একই ছাদের নিচে বসবাস করি।বড় চাচ্চুর এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলে রায়ায ভাই আর ছোট মেয়ে টায়রা যে কিনা আমার সকল কাজ-অকাজের সঙ্গী। তাছাড়া আমরা একে অপরকর বেস্টফ্রেন্ড ও। আর ছোট চাচ্চুর দুজন মেয়ে টিনা আর মিনা। পরিবারের একমাত্র চিরাগ হচ্ছে রায়ায ভাই।যায় কারণে সকলের চোখের মনি সে। তাই তার কথা ব্যতীত এই বাড়ির একটা গাছের পাতা ও নড়ে না"

আমি চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে মাকে ডাকতে লাগলাম আর বলতে লাগলাম,

-- ও মা তাড়াতাড়ি কড়া করে এককাপ কফি করে দাও না।

মা আরো উল্টো চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,

-- পারবো না নিজের কফি নিজে বানিয়ে খা আমার অনেক কাজ আছে।

মায়ের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আর ভাবতে লাগলাম সবাই খালি আমাকে অবহেলা করে কেউ আমাকে ভালোবাসে না।ঠিক তখনই একটা হাত আমার দিকে এক মগ কফি এগিয়ে দিল।আমি উপরে তাকিয়ে একগাল হেসে কফিটা নিলাম আর বলতে লাগলাম,

-- বড়মা তুমি ছাড়া আমাকে এই পরিবারের আর কেউই ভালোবাসে না।

কথাটা শুনে বড়মা হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন,

-- আমার পাগলী মেয়েটাকে এইকথা কে বলেছে? সবাই তোকে খুব ভালোবাসে বুঝেছিস?

আমি কিছু বলতে যাবো তখনই দেখি হনহন করে রায়ায ভাই বাড়িতে ঢুকে সোজা উপরে নিজের রুমে চলে গেল আর যাওয়ার আগে বড়মা কে বলে গেল,

-- মা আমাকে এক কাপ কড়া লিকারের কফি দিয়ে যাও তো।

ভাইয়ার বলতে দেরি আর আমার মায়ের কফি নিয়ে আসতে বেশি সময় লাগলো না। মায়ের এমন কাজ দেখে আমিতো পুরাই অবাক! কই আমি যখন কফি চাইলাম তখন কেমন আমাকে কাজের বাহানা

দেখালো।কিন্তু রায়ায ভাইয়া যেই বললো এমনি উনি কফি নিয়ে হাজির।

মা কফি হাতে নিয়ে আমাকে বলতে লাগলো,

-- যা তো বেলা তাড়াতাড়ি আমার সোনা বাবাটা কে কফি টুকু দিয়ে আয়। বাবাটা আমার কত পরিশ্রম করে বেড়ায় সারাদিন।

আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ভাইয়ার রুমের দিকে যেতে লাগলাম।আর ভাবতে লাগলাম,, দেখি আবার

একটু বলে ভাইয়া আমার অনুভূতির মূল্য দেয় কী না?

রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছি।ভিতরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না। অবশেষে ভয়কে জয় করে রুমে পা বাড়ালাম।রুমে গিয়ে দেখি কেউ নেই।তাই কফিটা টেবিলে রেখে বেডে বসে ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ভাইয়া হয়তো ওয়াশরুমে।

একটু পর ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে এলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ড্রেস চেঞ্জ করে নিয়েছে হয়তো গোসল ও করে নিয়েছে।

ভাইয়া আমাকে এখানে দেখে অনেকটা রেগে গেল আর চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,

-- তুই আমার রুমে কী করছিস?আর এতকিছুর পরেও তোর লজ্জা করলো না আমার সামনে আসতে?লজ্জা করবে কী করে?তোর তো লজ্জাই নেই।

কথাটা বলেই উনি আমার হাতের কব্জি ধরে টেনে রুমের বাইরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন। আর বলতে লাগলেন,

-- তোকে যেন আমার রুমের আর আমার আশেপাশের কখনো না দেখি।একদম আমার কাছে ঘেঁষতে আসবি না।

কথাটা বলেই উনি আমার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলেন আর আমি ঠোঁট চেপে নিজের কান্না আটকে রেখে দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে কাঁদতে লাগলাম।আমি ছোট হতে পারি কিন্তু আমার

ভালোবাসা মিথ্যা কিংবা আবেগ নয় তা উনাকে কী করে বোঝাই?

মা এসে কয়েকবার খাওয়ায় জন্য ডেকে গেল।কিন্তু আমি চুপ করে রইলাম কিছু বললাম না। আমার মোটেও খেতে ইচ্ছে করছে না। কারণ জানি আমি মুখ খুললেই আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে যাবে খাওয়ায় জন্য।তাই চুপ করে ঘুমের ভান ধরে রইলাম।
____
সকালে সবার চিল্লাচিল্লি শুনে আমার স্বাদের ঘুমটা ভেঙে গেল।ঘুম ঘুম চোখে হাতে ব্রাশ নিয়ে নিচে গেলাম।ব্রাশ করছি আর মা,বড়মা আর চাচির কীর্তি দেখছি। সকলে খুব তোড়জোড় লাগিয়ে দিয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না।কাউকে যে জিজ্ঞেস করবো তারও কোন সুযোগ পাচ্ছি না।

সূত্র: লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top