সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

চাঁদাবাজির হাতিয়ার প্রেস কার্ড

এক উপজেলায় ৮ প্রেসক্লাব, ‘সাংবাদিক’ ৩০০-র বেশি

শ্যামনগর, সাতক্ষীরা | প্রকাশিত: ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৪

ছবি: সংগৃহীত

শ্যামনগর উপজেলায় সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা এখন তলানিতে নেমে এসেছে। মাত্র একটি উপজেলায় ‘সাংবাদিক’ পরিচয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ যাদের অনেকেই পেশাটিকে ব্যবহার করছেন ব্যক্তিগত প্রভাব, চাঁদাবাজি, হুমকি ও দাপট দেখানোর জন্য।

স্থানীয় হকার, মুদি দোকানদার, তরকারিওয়ালা, রাজমিস্ত্রি, ড্রাইভার, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, এমনকি মাদক ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের দালালরা পাঁচ হাজার টাকার কম-বেশি বিনিময়ে ভুয়া সনদ নিয়ে অনলাইন পোর্টাল বা আঞ্চলিক ও জাতীয় পত্রিকা থেকে ‘প্রেস কার্ড’ সংগ্রহ করছেন। এই কার্ডই তাদের প্রধান অস্ত্র: পুলিশি ঝামেলা এড়ানো, প্রশাসনকে ভয় দেখানো, ব্যবসায়ী বা ঠিকাদারের কাছ থেকে টাকা আদায় এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো।

চিকিৎসক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক, শিক্ষক ও ঠিকাদাররাও নিজেদের ব্যবসা রক্ষার ‘শিল্ড’ হিসেবে এই কার্ড ব্যবহার করছেন।

শ্যামনগর উপজেলায় বর্তমানে ৮টি প্রেসক্লাব রয়েছে, যাদের সদস্য সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে:

  • শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাব: ৪০ জন

  • অনলাইন নিউজ ক্লাব: ৪০+ জন

  • শ্যামনগর রিপোর্টার্স ক্লাব: ৩০ জন

  • সুন্দরবন প্রেসক্লাব: ২৪ জন

  • উপকূলীয় প্রেসক্লাব: ১৬ জন

  • সীমান্ত প্রেসক্লাব: ১৭ জন

  • সীমান্তবর্তী প্রেসক্লাব: ১০ জন

  • রিপোর্টার্স ইউনিটি: ২৬ জন

এসব সংগঠনের বাইরে আরও ৭০–৭৫ জন ব্যক্তি নিজেদের ‘স্বাধীন সাংবাদিক’ পরিচয়ে চলাফেরা করছেন।

উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে থানা, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শিক্ষা অফিস—কোথাও শান্তি নেই। একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, “এত সাংবাদিক আমরা জীবনে দেখিনি। আবদার পূরণ না করলে সিরিজ নিউজ দেওয়া হয়। অনেকে সরাসরি টাকা চান। না দিলে ভুয়া প্রচারণা চালানো হয়।”

স্কুলশিক্ষক ইয়াসুনুর রহমান বলেন, “যারা পড়াশোনাই জানে না, তারাই এখন আমাদের স্কুলে এসে হুমকি দেয়। এটা সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজি ছাড়া কিছু না।”

শ্যামনগরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাইদ বলেন, “যারা সত্যিকারের সাংবাদিকতা করি, তারাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের কাছে দাবি—ভুয়া অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করুন এবং প্রেস কার্ড কঠোর যাচাই ছাড়া ইস্যু করবেন না।”

বর্ষীয়ান সাংবাদিক শেখ আফজালুর রহমান বলেন, “২০–৩০ বছর সম্মান নিয়ে কাজ করছি। এখন আমরাও লজ্জায় মুখ দেখাতে পারি না। কিছু কার্ডবাজ সব নষ্ট করে দিয়েছে।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top