১৯ ঘণ্টা পরও উদ্ধার সম্ভব নয়

গভীর নলকূপে ছেলে, রাতভর অপেক্ষার পর যা বললেন মা

রাজশাহী প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৫

শিশু সাজিদের অপেক্ষায় তার মা । ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কয়েলের হাট মধ্যপাড়া এলাকা। কুয়াশায় ঢেকে থাকা শীতের সেই রাতেই দুই বছরের শিশু সাজিদকে একনজর দেখতে সারারাত অপেক্ষায় ছিলেন মা রুনা বেগম। অসহায় চোখে শুধু তাকিয়ে ছিলেন সেই পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের গর্তের দিকে, যেখানে আটকে আছে তার হৃদয়ের টুকরো।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর একটার দিকে মায়ের পেছন পেছন হাঁটছিল সাজিদ। হঠাৎই পড়ে যায় একটি পরিত্যক্ত টিউবওয়েলের প্রায় ৪০ ফুট গভীর গর্তে। ঘটনার পর শুরু হয় একটানা উদ্ধার অভিযান। কিন্তু বিকেল, সন্ধ্যা, রাত পেরিয়ে সকাল হলেও শিশুটিকে উদ্ধার সম্ভব হয়নি।

ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট, তিনটি ভেকু এবং রাতভর উদ্ধারকর্মীদের ব্যস্ততা—সবই থমকে ছিল সেই সংকীর্ণ, অন্ধকার, শ্বাসরুদ্ধকর গর্তের সামনে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এক্সকাভেটর না থাকায় উদ্ধারকাজ আরও জটিল হয়ে পড়ে। পুরো তানোরে মেশিন না পাওয়ায় অবশেষে রাত ৮টার দিকে মোহনপুর থেকে দুটি ছোট এক্সকাভেটর আনা হয়।

বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে ৪০ ফুট গভীর গর্ত তৈরি শেষ করে উদ্ধারকর্মীরা। এরপর শুরু হয় মূল সুরঙ্গ খননের কাজ—যে সুরঙ্গ দিয়ে পৌঁছানোর কথা আটকে থাকা ছোট্ট সাজিদের কাছে। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলছে সেই সুরঙ্গ খোঁড়ার কাজ, কিন্তু এখনো পাওয়া যায়নি সাজিদের কোনো খোঁজ।

এদিকে শিশুটির মা রুনা বেগম রাতভর অপেক্ষায় ছিলেন মানুষের ভিড়ের মাঝেই। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন, আবার জ্ঞান ফিরেই তাকিয়ে থাকছিলেন সেই গর্তের দিকে—অপেক্ষার চোখে একটাই প্রশ্ন, “আমার ছেলেটাকে কি আমি আবার জড়িয়ে ধরতে পারব?”

তিনি জানান, “আমার ছেলের প্রচণ্ড জ্বর ছিল। দাদার সঙ্গে হাটে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু জ্বর থাকায় দাদা নেয়নি। সকালে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছি। কে জানত এমন সর্বনাশ অপেক্ষা করছে! আমার অসুস্থ ছেলেটা এখন ৪০ ফুট মাটির নিচে… এই তীব্র শীতে…”

শিশু সাজিদের জীবনের জন্য দোয়া করছেন স্থানীয় মানুষজন। শীতের রাতে দীর্ঘ প্রতীক্ষা, মায়ের কান্না আর শিশুটির বাঁচার সংগ্রামে থমকে আছে পুরো এলাকা।

উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top