ঢাবির হলে চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যা

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২:২৪

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে হলের গেস্টরুমে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

জানা যায়, রাত ১০টার দিকে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে আটক করে শিক্ষার্থীরা। এরপর তাকে কয়েক দফা পেটানো হয়। রাতে হলের ক্যানটিনে বসিয়ে তাকে ভাতও খাওয়ানো হয়। এরপর আবারও মারধর করা হয় তাকে।

এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শিক্ষার্থীরাই ঢাকা মেডিকেলে কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পরপরই লাশ রেখে শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল থেকে যে যার মতো চলে যায়।

ঢাকা মেডিকেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা রাত বারোটার একটু পরে এই লোককে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এরপর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করলে সেই শিক্ষার্থীদের আর পাওয়া যায়নি। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, লাশ ঢামেকের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি শাহবাগ থানাকে অবগত করা হয়েছে।

এদিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগের ঘটনায় চার শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তারা হলেন,- ছাত্রলীগের সদ্য পদত্যাগ করা উপ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জালাল মিয়া; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন; পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মোত্তাকিন সাকিন এবং সাজ্জাদ।

আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছ ঢাবি প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান, প্রক্টরিয়াল টিম চারজনকে আটক করে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেছে। আটক ৪ শিক্ষার্থী ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে হল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামীকাল সকালে কমিটি চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেবে।

এর আগে গতকাল রাতে ফজলুল হক মুসলিম হলে গণপিটুনিতে তোফাজ্জল হোসেনের (৩০) মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করেছে ঢাবি প্রশাসন। শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাবুদ্দিন শাহীন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান হলের শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জলকে ছাত্রাবাস থেকে মোবাইল ফোন চুরি করেছে বলে সন্দেহ করার পর এই ঘটনা ঘটে।

ওই হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহ মোহাম্মদ মাসুম গণমাধ্যমকে বলেন, তোফাজ্জলকে হলের ভেতরে আটকে রেখে মারধর করেন শিক্ষার্থীরা। মব (জনতার আক্রশ) হামলার পর হল কর্তৃপক্ষ তোফাজ্জলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে হস্তান্তর করে। তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার পরিবর্তে প্রক্টরিয়াল টিম তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। পরে পুলিশের পরামর্শে তোফাজ্জলকে হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করছে।

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top