স্বর্ণের পর রুপার দামে নতুন রেকর্ড, ছয় মাসে ছুঁতে পারে ৫৫ ডলার
বাণিজ্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪২

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের পর এবার রুপার দামও ইতিহাস গড়েছে। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ এবং মার্কিন সুদের হার কমার প্রত্যাশায় রুপার দাম সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, স্পট মার্কেটে প্রতি আউন্স রুপার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৫৭ ডলার, যা এখন পর্যন্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত রুপার দাম বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ—২০১০ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত।
একইদিনে স্বর্ণের দামও প্রথমবারের মতো ৪ হাজার ডলার সীমা ছাড়িয়ে যায়। তামার দামও পৌঁছে গেছে গত ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
ওএএনডিএ’র বিশ্লেষক জাইন ভাওদা বলেন, “অনেক খুচরা বিনিয়োগকারী এখন রুপাকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন। এতে চাহিদা বাড়ছে এবং দামও ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। সরবরাহ সংকট ও শিল্প খাতে চাহিদা বৃদ্ধির কারণে আগামী ছয় মাসে রুপার দাম ৫৫ ডলার প্রতি আউন্সে পৌঁছাতে পারে।”
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোমেক্স গুদামে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের ফলে লন্ডনের স্পট মার্কেটে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে, যা রুপার দামে আরও চাপ সৃষ্টি করছে।
এইচএসবিসি’র বিশ্লেষক জেমস স্টিল জানান, মার্কিন আমদানি শুল্কের আশঙ্কায় বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এতে লন্ডন স্পট ও নিউইয়র্ক ফিউচার দামের মধ্যে বড় ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে—যার সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা নিউইয়র্কে স্বর্ণ ও রুপা স্থানান্তরে ঝুঁকছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ তালিকায় রুপা যুক্ত হওয়ায় নতুন করে শুল্ক জল্পনা শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে কোমেক্সের রুপা শেয়ার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন (এলবিএমএ) জানায়, সেপ্টেম্বর শেষে লন্ডনের ভল্টে থাকা রুপার পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন, যার মূল্য প্রায় ৩৬.৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণ কিনতে লাগে ৮২ আউন্স রুপা, যা গত এপ্রিলে ছিল ১০৫ আউন্স—এর মানে, রুপার দাম স্বর্ণের চেয়েও দ্রুত বাড়ছে।
মেটালস ফোকাসের বিশ্লেষক ম্যাথিউ পিগট বলেন, “রুপা এখন শুধু শিল্প ধাতু নয়, বিনিয়োগেরও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। আমাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে রুপার দাম ৬০ ডলার ছাড়াতে পারে।”
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, সৌর প্যানেল, ইলেকট্রনিক্স ও বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো প্রযুক্তি খাতে রুপার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। মরগান স্ট্যানলির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর রুপা-সমর্থিত এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) বিনিয়োগ বেড়েছে এবং চীনে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বৃদ্ধির কারণে শিল্প খাতে রুপার চাহিদা আরও বাড়ছে।
যদিও সৌর খাতের বৃদ্ধির গতি কিছুটা শ্লথ হতে পারে, তবুও বিশ্লেষকদের ধারণা—নিকট ভবিষ্যতে রুপার দাম শক্ত অবস্থান ধরে রাখবে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।