বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

পেঁয়াজ বাজারে ব্যাপক কারসাজি, পাঁচ দিনে কেজিতে ৩০ টাকা বৃদ্ধি

নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২০

ছবি: সংগৃহীত

পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন (আইপি) না দেওয়ায় বাজারে পণ্যটি নিয়ে ব্যাপক কারসাজি শুরু হয়েছে। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম এখন ১০০ থেকে ১১০ টাকায় পৌঁছেছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাজার ও মহল্লার দোকানে এর দাম আরও বেশি।

আমদানিকারকরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, পরিকল্পিতভাবে সিন্ডিকেট করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর অক্টোবর মাসে অতিবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ রোপণে বিলম্ব হয়েছে। ফলে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে সময় লাগবে। এ অবস্থায় যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত না করা গেলে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

আমদানিকারকদের মতে, পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন না দেওয়া হলে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় স্থানীয় উৎপাদনের ওপরই পুরো চাহিদা নির্ভর করছে। মৌসুমের শেষে মজুত কমে যাওয়ায় এবং শুকিয়ে ওজন কমে যাওয়ার কারণে পাইকারি পর্যায়েই দাম বাড়ছে।

কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী শাহীন মিয়া জানান, “আমাদের আড়ত থেকে এখন ১০০ থেকে ১০৪ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম লাফিয়ে বাড়ছে।”

আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, “পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। সরবরাহ কমলে সাধারণত কয়েক টাকাই বাড়ে, কিন্তু পাঁচ দিনে কেজিতে ৩০ টাকা বাড়া রহস্যজনক।”

রাজধানীর শ্যামবাজার ও নয়াবাজারের আড়তদাররা বলছেন, পর্যাপ্ত দেশি পেঁয়াজ মজুত থাকলেও কিছু আমদানিকারক ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার সুযোগ তৈরির জন্য কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছেন।

শ্যামবাজারের এক আড়তদার বলেন, “দেশে পেঁয়াজ আছে, তবুও কিছু গোষ্ঠী দাম বাড়িয়ে আমদানির সুযোগ নিতে চায়।”

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক বলেন, “আমদানির আবেদন দেওয়া সত্ত্বেও সরকার আইপি দিচ্ছে না। ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বাড়ছে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি এখনই আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে তিন থেকে চার দিনের মধ্যেই দাম ৫০ টাকার মধ্যে নেমে আসবে।”

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই একইভাবে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পথ খুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। সরকারকে এবার কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে দাম ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাবে।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানির আইপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় নীতি অনুযায়ী হয়। বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া আইপি দেওয়া সম্ভব নয়।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান জানান, “আইপি দেওয়া বা না দেওয়া সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। বাজার পরিস্থিতি ও কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করেই অনুমতি দেওয়া হয়।”

অন্যদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, “এ মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কোনো কারণ নেই। কারসাজি চক্র সক্রিয় হয়ে বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছে।”

তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, “এখনও কৃষকদের হাতে চার লাখ টন পেঁয়াজ আছে। ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন ও মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top