• ** জাতীয় ** আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা ** আবারও তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি ** চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে দুই নারীর মৃত্যু ** ইউআইইউ ক্যাম্পাসে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি’ নিয়ে তোলপাড় সারাদেশ ** সিলেটে মসজিদে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু ** নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু ** সব ধরনের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন : https://www.newsflash71.com ** সব ধরনের ভিডিও দেখতে ভিজিট করুন : youtube.com/newsflash71 ** লাইক দিন নিউজফ্ল্যাশের ফেসবুক পেইজে : fb/newsflash71bd **


লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাসে নীরোগ থাকুন বারমাস

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৭

ছবি: সংগৃহীত

লোকায়ত শাক, লৌকিক খাদ্যাভ্যাস, শিরোনামে মানবাধিকারকর্মী নজরুল জাহিদের লেখাটি প্রকাশিত হয় নিউজবাংলায়। নিউজফ্ল্যাশ সেভেন্টিওয়ানের পাঠকদের জন্য লেখাটি তুলে ধরা হলো। 

প্রাচীনকালে গ্রামের বাঙালির অন্যতম প্রধান খাবার ছিল শাক-সবজি। চতুর্দশ শতকের ‘প্রাকৃত-পৈঙ্গল’-এ আছে, ‘কলাপাতায় গরম ভাত, গাওয়া ঘি, মৌরলা মাছের ঝোল আর নালিতা শাক (পাট শাক) যে স্ত্রী নিত্য পরিবেশন করিতে পারেন তাঁহার স্বামী পুণ্যবান।‘

আমাদের খাদ্যাভ্যাস সংস্কৃতির শিকড় থেকে আসা। এটি প্রধানত হাজার বছর ধরে পুরাণ, ধর্ম, মিথ ও লোকাচারের ভিত্তিতে নির্মিত, আর অংশত এসেছে অন্নাভাব বা দারিদ্র্য থেকে। খাদ্যে শাকের সংযোজনও সেভাবে।

নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী এক সাক্ষাৎকারে বৈষ্ণব সাহিত্যিক হরিদাস দাসের ভাই মুকুন্দ দাসের আতিথেয়তার স্মৃতিচারণা করে বলেছেন, সেদিন অন্য কিছু আয়োজন করতে না পেরে মাথার ওপর সুবিস্তারি তমালগাছের পাতা বেটে ভর্তা করে তিনি অতিথিদের ‘মধ্যাহ্নের’ (বৈষ্ণবরা দুপুরের আহারকে মধ্যাহ্ন বলে) আয়োজন করেছিলেন।

রাজা দশরথ মারা গেছেন এই সংবাদ পেয়ে বনবাসে থাকা রাম ইঙ্গুদি ফল বেঁটে তার সঙ্গে বদরি (কুল) মিশিয়ে কুশগাছের পাতায় বিছিয়ে ‘পিন্যাক’ তৈরি করে পিতার উদ্দেশে পিণ্ডদান করেছিলেন।

বলা বাহুল্য, বনবাসে না থাকলে নিশ্চয় উপাচারের আয়োজন অন্যরকম হতো। তাই ভাদুড়ি বলছেন, ‘আমরা যা খেতে চাই (বা পাই), দেবতাকে আমরা তাই দিই।‘

সুতরাং সারাংশ টানা যায়, আমাদের আশপাশে যা পাওয়া যায়, তা-ই নিজেরা খাই এবং এভাবে আমাদের খাদ্যাভ্যাস বা খাদ্যসংস্কৃতি গড়ে ওঠে। শাক সেই অভ্যাসের অন্যতম উপাদান।

নীহাররঞ্জন রায়ের লেখা ‘বাঙালীর ইতিহাস আদিপর্ব’ গ্রন্থে আছে, ‘নানা প্রকারের শাক খাওয়া বাঙালির এক প্রাচীনতম অভ্যাস।‘ প্রাচীনকালে গ্রামের বাঙালির অন্যতম প্রধান খাবার ছিল শাক-সবজি।

চতুর্দশ শতকের ‘প্রাকৃত-পৈঙ্গল’-এ আছে, ‘কলাপাতায় গরম ভাত, গাওয়া ঘি, মৌরলা মাছের ঝোল আর নালিতা শাক (পাট শাক) যে স্ত্রী নিত্য পরিবেশন করিতে পারেন তাঁহার স্বামী পুণ্যবান।‘

পল্লীবাসী কৃষিনির্ভর বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের পরিচয় প্রাকৃত পৈঙ্গলের আরেকটি পদে পাওয়া যায়, ‘পুত্র পবিত্রমনা, প্রচুর ধন, শুদ্ধচিত্তা স্ত্রী ও কুটুম্বিনী, হাঁক দিলেই ত্রস্ত ভৃত্যগণ- এসব ছেড়ে কোন বর্বর স্বর্গে যেতে চায়?’

পঞ্চদশ শতকের চৈতন্যচরিতামৃতে চৈতন্য দেবের খাদ্যতালিকায় ‘১০ প্রকার’ শাকের উল্লেখ দেখা যাচ্ছে-

পীত সুগন্ধী ঘৃতে অন্ন সিক্ত কৈল

চারিদিকে পাতে ঘৃত বাহিয়া চলিল।

কেয়াপত্র কলার খোলা ডোঙ্গা সারি সারি

চারিদিকে ধরিয়াছে নানা ব্যঞ্জন ভরি।

দশ প্রকার শাক নিম্ব সুকতার ঝোল

মরিচের ঝাল ছানাবড়া, বড়ি, ঘোল।

ষোড়শ শতকের চৈতন্যকাব্যগুলোতেও বাঙালির খাবার হিসেবে শাকের উল্লেখ রয়েছে। চণ্ডীমণ্ডলে অতি সাধারণ খাদ্য বর্ণনায় আছে ‘দুই তিন হাঁড়ি’ শাকের কথা!

খুদ কিছু ধার লহ সখীর ভবনে

কাঁচড়া খুদের জাউ রান্ধিও যতনে।

রান্ধিও নালিতা শাক হাঁড়ি দুই তিন

লবণের তরে চারি কড়া কর ঋণ।

অধ্যাপক যতীন সরকার একবার আমাকে গীতার (?) একটি শ্লোক শুনিয়েছিলেন, যার মর্মার্থ হচ্ছে, ‘ঘরের আশপাশেই যখন স্বাস্থ্যরক্ষা আর উদরপূর্তির ব্যবস্থা ছড়িয়ে আছে, তখন পোড়া পেটের জন্যে পাপকার্য কেন?' আমার স্কুলের ‘পণ্ডিত স্যার’ বৈষ্ণব ছিলেন, তিনি পুঁই শাক খেতেন না, বলতেন ওটা ‘আমিষ’।

শাক কিভাবে সংস্কৃতির অংশ হলো তা বাঙালির ১৪ শাকের আচারের উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হবে। দেওয়ালি বা ভূত চতুর্দশীর দিনদুপুরে খেতে হয় ১৪ শাকের ব্যঞ্জন আর সন্ধ্যায় জ্বালাতে হয় ১৪ প্রদীপ। ১৪ শাক* খেতে হয় কারণ এটাই ছিল এককালের কৃষিজীবী বঙ্গবাসীর নিয়ম।

কারোর জন্যে ছিল ধর্মীয় আচার। আর ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে ১৪ পুরুষের** আত্মাকে তুষ্ট করতে হয়। পুরাণ মতে, মৃত্যুর পর মানব শরীর পঞ্চভূতে (আকাশ, মাটি, জল, হাওয়া, অগ্নি) বিলীন হয়। তাই মাটি থেকে তুলে আনা শাক খেলে অতৃপ্ত আত্মার রোষানল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। লোকধর্মের এই আচারের মধ্যে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার এক অদ্ভুত সৌন্দর্য আছে।

কেউ যদি এই আচার প্রতিপালন করতে চান তাহলে তাকে ১৪ রকম শাকের (বেশির ভাগই অ-চাষকৃত বনজ উদ্ভিদ) প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে, অর্থাৎ যথেচ্ছাচারের মাধ্যমে কোনো একটি প্রজাতি যেন বিলীন হয়ে না যায়, সেদিকে মনোযোগী হতে হবে।

একসঙ্গে অনেক প্রদীপ জ্বালানো ক্ষতিকারক কীটের হাত থেকে হৈমন্তিক ফসল রক্ষা করারও প্রাকৃতিক উপায়। দেওয়ালির অমাবস্যা রাতে উন্মুক্ত জ্বলন্ত প্রদীপে আত্মাহুতি দিয়ে পোকামাকড় মরে যায়। কীটনাশক ছাড়াই ফসল রক্ষা পায়। আবার এই সময় আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়। উত্তরের ঠাণ্ডা হাওয়া বইতে শুরু করে।

ঋতু পরিবর্তনের সময় ১৪ শাকের মিলিত পুষ্টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, সামাজিক ও লোকধর্মীয় আচারাদি আসলে প্রয়োজন ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।

জমির বৈশিষ্ট্যের কারণেই বিনা যত্নে জলা-জঙ্গল, পতিত জমি, পুকুর পাড়, জমির আইলে অনেক ধরনের শাক জন্মায়। মানুষ এদের পরিবর্তন ঘটাবার কোনো আয়োজন করেনি কখনও। সার বা পানি দিয়ে যত্নে পালন হয় না, ফলে অনেকটাই অবিকৃত থেকে গেছে এদের অবয়ব, স্বাদ ও গন্ধ।

তবে স্থানাভাবের কারণে একসময়ের শতাধিক অনাবাদি শাকের সংখ্যা এখন দ্রুত কমে আসছে। যেমন নটে শাক। তিন ধরনের নটের মধ্যে রাঙ্গানটে আর পাওয়া যায় না। সবুজনটে পাওয়া যায় আর কাঁটানটে বিলীন হওয়ার পথে।

মাথা ধরলে কাঁটানটের মূল এবং গোলমরিচ সামান্য পানি দিয়ে বেটে কপালে লাগাতে দেখা যায় গ্রামে। গর্ভাবস্থায় এবং আঁতুড়ঘরের খাবারের তালিকায় নটে শাক থাকত। এ ছাড়া অনেক অপ্রচলিত শাকও খাওয়ার চল আছে। যেমন: সজিনা, পিপুল, তেলাকুচা, নুনিয়া, ঢেঁকি, কলমি, গন্ধভাদালি, পুনর্নভা ইত্যাদি।

পিপুল সুগন্ধিযুক্ত একটি লতানো গাছ। পাতা দেখতে অনেকটা পানের মতো। খোলা জংলা অথবা বদ্ধ জায়গায় জন্মায়। অ-চাষকৃত লতাজাতীয় উদ্ভিদ, তাই পরনির্ভরশীল। বর্ষা মৌসুমে দ্রুত বাড়ে। কাশিতে ও হাঁপানিতে পিপুলের ঝোল করে খাওয়া হতো। এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ।

সজিনা শাককে বলা হয় ‘অলৌকিক শাক’, পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। একে বলা হয় নিউট্রিশনস সুপার ফুড এবং এর গাছকে বলা হয় মিরাকল ট্রি। ডাল ও বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করলেও আমাদের দেশে সাধারণত ডালের মাধ্যমে বা অঙ্গজ জননের মাধ্যমে বংশবিস্তার করানো হয়। এই গাছ বাড়েও খুব দ্রুত। দুই-তিন বছরে ফুল দেয়। এর ফুল, পাতা, ফল (যাকে বলি শজনে ডাঁটা) সব কিছুই সুস্বাদু।

নুনিয়া শাকের স্বাদ একটু নোনতা। পতিত জমি, জমির আইল, রৌদ্রোজ্জ্বল মাটিতে জন্মায়। বলা হয় ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ এই শাকে অন্যান্য সব শাক-সবজির চেয়ে বেশি।

ঢেঁকি শাকের আরেক নাম বউ শাক। বর্ষাকালে স্যাঁতসেঁতে ছায়াময় এলাকার উপযোগী। সারা বছর চুপসে থাকলেও বর্ষার মৌসুমে বেশ তরতাজা হয়ে ওঠে। গ্রামাঞ্চলে জনপ্রিয়। ঢাকায় পাওয়া যায়, তবে কম।

কলমি শাক মূলত জলের আর ভেজা মাটির শাক। জন্মের পর শিশু মায়ের বুকের দুধ না পেলে মাকে কলমি শাক রান্না করে খাওয়াতে দেখা যায়। এই শাক পুরুষের যৌন স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী বলে শোনা যায়। আজকাল কলমি বলতে বাজারে যেটা দেখা যায় তা চাষ করা হাইব্রিড কোনো পরিবর্তিত প্রজাতি। জীবনানন্দের সেই 'সারা দিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে' দোল দোলানো, গ্রীবা বাঁকানো কলমি এগুলো নয়।

আমাদের শৈশব ছিল মূলত শাকময়। সব যে ভাতের সঙ্গে তরকারি হিসেবে খাওয়া হতো তা নয়। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবেও খাওয়া হতো। যেমন: আমাশয় হলে থানকুনি শাক বেঁটে তার রস, পেট ফাঁপলে বা বদহজম হলে গন্ধভাদালির পাতা সামান্য লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে সেই সিদ্ধ পানি এক গ্লাস, কৃমি হলে পটোলের শাক (পটোলের লতি) ভাজা গরম ভাতের সঙ্গে খাওয়ানো হতো।

জ্বরে বা মাথা ধরলে সামান্য লবণ দিয়ে আমরুল শাক বেঁটে কপালে প্রলেপ দেয়া হতো। আমাদের বাড়ির পাশে মতলেব নামের এক বাউল সাধুর আখড়া ছিল। পাশেই রাস্তা। একবার এক মাতাল খুব উপদ্রব করছিল রাস্তায়, সাধুর কাছে গাঁজা চাচ্ছিল।

সাধু বলছিলেন, তিনি গাঁজার ব্যবসা করেন না, কিন্তু মাতাল শুনবে না। শেষে আমার নানি বাড়ির পাশ থেকে পুনর্নভা শাক তুলে বেঁটে তার রস খাওয়াতে দেখেছিলাম। কিছুক্ষণ পর মাতালের হুঁশ ফিরে এলো। অনেক বছর পর সেদিন চন্দ্রিমা উদ্যানে হাঁটতে যেয়ে পুনর্নভা দেখতে পেয়ে সেই পুরোনো কথা মনে পড়ছিল।

একটা কথা বলা দরকার। বাংলার গ্রামে অনাবাদি শাক সব সময়ে পাবলিক প্রপার্টি হিসাবে গণ্য হয়। অর্থাৎ জলা জঙ্গলে তো বটেই, এমনকি কৃষকের আবাদি জমিতেও যখন সাথি ফসল হিসেবে বথুয়া, দণ্ডকলস, জমির আইলে হেলেঞ্চা, থানকুনি ইত্যাদি জন্মায়, সেটা আর কৃষকের নিজের থাকে না। তার ওপর অধিকার বর্তায় গ্রামের সবার।

যে কেউ (সাধারণত নারীরা) জমির মালিকের অনুমতি ছাড়াই অনাবাদি এসব শাক তুলতে পারেন। এমনকি পথচলতি ভিনগায়ের নারীও কোনো সংকোচ ছাড়াই খেতে নেমে আঁচল ভরে এই শাক তুলে নিয়ে যেতে পারেন। কারণ এ শাক তো কোনো মালিক লাগায়নি, এটা নিজ থেকেই জন্মেছে। তাই এই শাক তোলার অধিকার সবার।

গ্রামীণ এই সংস্কৃতির সঙ্গে নারী-অধিকারের আদিম সংযোগ পাওয়া যায়। যে নারী এই শাক তোলেন তিনি আবাদি ফসলের কোনো ক্ষতি করেন না। অনাবাদি শাক তুলতে গিয়ে কখনও গাছসহ উপড়ে ফেলেন না। শুধু যে অংশটুকু রান্নার জন্য দরকার সে অংশটুকু তারা অতি যত্নের সঙ্গে তোলেন। এ কাজটি তারা খুব ভালোভাবেই করতে পারেন। এটা তাদের ইনডিজিনাস নলেজ।

শৈশবে দেখেছি, গ্রামীণ নারীরা ঘরে একটু চাল থাকলেই নিশ্চিন্ত থাকতেন। তাদের এই স্বস্তির একমাত্র কারণ ছিল শাক। একটু শাকভাত হলেই চলে যেত তাদের সংসার। এমনকি আষাঢ় মাসের অভাবের সময় কেবল কলমি শাক সিদ্ধ খেতেও দেখেছি তাদের। তবু তাদের কণ্ঠে শাক তোলার গান থাকত।

গানগুলোতে নারীর বিষাদ, বঞ্চনা, প্রেম আর পরিচর্যার সব গল্প মিশে থাকত। মনে আছে, একটা গান শুনেছিলাম বথুয়ার শাক নিয়ে (কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর অঞ্চলের উচ্চারণ ‘বাইতো শাক’)।

গানে বলা হচ্ছে, এপারে ওপারে অনেক বথুয়ার শাক, কিন্তু শাক তুলতে যেয়ে সাপ দেখে বউ ফিরে এসেছে ফলে সবাই তাকে তিরস্কার করছে। ঘরে স্বামীর কটূ কথায় একে একে সে যায় রান্নাঘরে, উঠোনে, গোয়ালেৃ যেখানেই যায় সবাই একই গঞ্জনা দেয়। বোঝা যায় শ্বশুরবাড়িতে তার নিজস্ব কোনো জায়গাই নেই। মনের কথা বলা বা শোনার মতো কোনও মানুষও নেই।

বথুয়া শাকের গান এভাবেই কিছু অমোঘ সত্যকে ধরে রাখে সুরের বাঁধনে। পুরো গানটা মনে নেই কিন্তু সাপের ফণা তোলায় ভয় পেয়ে শাক তোলা ফেলে ফিরে আসা নতুন বউটির জন্য এখনও মায়া জেগে আছে মনেৃ

ইপার বাইতো উপার বাইতো, বাইতো দুমদুম করে

বাইতো শাক তুলতি গেলি সাপে পট করে

আরেকটা গানে পাট শাক তুলতে গিয়ে আনাড়ি বউ পাটের ডগা ভেঙে ফেলেছে দেখে স্বামী মেরেছেন। বউ তাই স্বামীকে রাগ করে ‘বুড়ো’ বলছেন-

পাটশাক তুলতি পাটের ডুগা ভাইঙ্গেছে

তাই দেখে বুড়া আমাক বড্ড মাইরেছে

বুড়ার মারে আমার কপাল ফাইটেছেৃ

অনেক অভিযোগ আপত্তির পর বউয়ের মান ভাঙে। একটু আগে গ্রামের মানুষকে তিনি সাক্ষী মানতে ডাকছিলেন, অবশেষে তাদেরকেই জানিয়ে দেন, ‘কিছুই করেনি বুড়া সুহাগ কইরেছে।‘

এই লেখা পড়ে যদি নতুন করে শাক খেতে ইচ্ছা করে, তাহলে মনে রাখবেন, রান্নার সময় মাথায় রাখতে হয়- অল্প সময়, বেশি তাপ, রঙ বজায় রাখা, রান্নার প্রথম দিকে ঢাকনা না দেয়া, আলাদা পানি না দেয়া খুব জরুরি। বড়জোর পাঁচ মিনিটে শেষ করলেই ভালো। আর হ্যাঁ, ফেলতে না জানলে শাক খেয়ে মজা নেই। কচি পাতার স্বাদই আসল শাকের স্বাদ।

* প্রধানত, ওল, বেতো, সরষে, পুঁই, শুশনি, নিম, মেথি, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, শুষণী, লাউ এবং স্থান ও প্রাপ্যতা ভেদে অন্য কোনো শাক।

** পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতামহী, প্রমাতামহী, বৃদ্ধপ্রমাতামহী, শ্বশুর, শাশুড়ি।

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top