মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ডায়াবেটিস কী ও কেন হয়?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:০৭

ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন আসতেই পারে, ডায়াবেটিস কী?

আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ, যা কখনো সারে না। কিন্তু এই রোগকে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আইরিশ ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, যখন আমরা কার্বোহাইড্রেট বা সাধারণ শর্করাজাতীয় খাবার খাই, তখন তা ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়।

ইনসুলিন হচ্ছে একধরনের হরমোন। এর কাজ হলো এই গ্লুকোজকে মানুষের দেহের কোষগুলোয় পৌঁছে দেওয়া। এরপর সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে শরীরের কোষগুলো শক্তি উৎপাদন করে। সেই শক্তি দিয়েই রোজকারের কাজকর্ম করে মানুষ। সুতরাং যখন এই গ্লুকোজ শরীরের কোষে পৌঁছাবে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হবে।

যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন ওই মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যখন প্রস্রাব বেশি হয়, তখন ডায়াবেটিসে ভোগা রোগী তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন।

অন্যদিকে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ বের হয়ে যায়। এতে করে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারে না দেহের কোষগুলো। ফলে রোগী দুর্বলতা অনুভব করেন। রোগী যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তবে তার রক্তনালি, স্নায়ু, কিডনি, চোখ ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

কেন হয় ডায়াবেটিস ?

ডায়াবেটিস এক ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। এক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। অনেকের ক্ষেত্রে ইনসুলিন একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়।

যে কোনো খাবার খাওয়া পর আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, তা শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানি বা শক্তি হিসেবে।

শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হতে না পারে অথবা এটা ঠিক মতো কাজ না করে তখনই ডায়াবেটিস হয়। এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে।

সহজভাবে বললে,  আমরা যখন কোন খাবার খাই তখন আমাদের শরীর সেই খাদ্যের শর্করাকে ভেঙে চিনিতে (গ্লুকোজ) রুপান্তরিত করে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয়, সেটা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় চিনিকে গ্রহণ করার জন্যে। এই চিনি কাজ করে শরীরের জ্বালানী বা শক্তি হিসেবে। শরীরে যখন ইনসুলিন তৈরি হতে না পারে অথবা এটা ঠিক মতো কাজ না করে তখনই ডায়াবেটিস হয়। এবং এর ফলে রক্তের মধ্যে চিনি জমা হতে শুরু করে।

দুশ্চিন্তা-অতিচিন্তা মুক্ত রাখুন

দিন দিন সামাজিক প্রতিযোগিতা বাড়ছে। সামাজিক মাধ্যম যেমন ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামে অন্যের জীবন উদযাপন, সাফল্য, আনন্দের ছবি-ভিডিও অল্প বয়সীদের মধ্যে নিজের জীবন, সাফল্য নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।

এই দুশ্চিন্তা, অতিচিন্তার ফাঁদে পা দিলে শরীরে এমন কিছু হরমোনের প্রভাব বাড়ে, যা কিনা ইনসুলিন হরমোনের কাজে বাধা দেয়। আর এই হরমোন নিজের কাজটুকু ঠিকমতো না করতে পারলে যে অচিরেই ডায়াবেটিসের ফাঁদে পড়তে হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত মনকে প্রফুল্ল রাখুন, প্রয়োজনে মেডিটেশন করুন, যেকোনো মূল্যে মনকে দুশ্চিন্তা-অতিচিন্তা মুক্ত রাখুন।

মৃসন শাদা আটার রুটির পরিবর্তে খেতে হবে ভুষিওয়ালা আটার রুটি। এটাই প্রথম ধাপ।স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে রয়েছে শাক সব্জি, ফল, বিন্স এবং মোটা দানার খাদ্য শস্য। স্বাস্থ্যকর তেল, বাদাম খাওয়াও ভালো। ওমেগা থ্রি তেল আছে যেসব মাছে সেগুলো বেশি খেতে হবে। যেমন সারডিন, স্যামন এবং ম্যাকেরেল। এক বেলা পেট ভরে না খেয়ে পরিমানে অল্প অল্প করে বিরতি দিয়ে খাওয়া দরকার।

শরীর চর্চ্চা বা ব্যায়াম করার মাধ্যমে রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে রখা সম্ভব। প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টার মতো ব্যায়াম করা দরকার। তার মধ্যে দ্রুত হাঁটা এবং সিড়ি বেয়ে ওপরে ওঠাও রয়েছে।ওজন কম রাখলেও চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যদি ওজন কমাতে হয় তাহলে সেটা ধীরে ধীরে করতে হবে। সপ্তাহে আধা কেজি থেকে এক কেজি পর্যন্ত।

মেটাবলিক ডিজঅর্ডার কী, কেন হয়?

মেটাবলিক ডিসঅর্ডার বা বিপাকীয় ব্যধি হল এমন একটি ব্যধি যা শরীরের প্রোটিন, চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেটের মতো ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলোর প্রক্রিয়াকরণ এবং বিতরণকে নেতিবাচকভাবে পরিবর্তন করে। মেটাবলিক ডিসঅর্ডার তখনই ঘটে যখন শরীরের অস্বাভাবিক রাসায়নিক বিক্রিয়া স্বাভাবিক বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করে।

মেটাবলিক ডিসঅর্ডারের বেশ কিছু লক্ষণ আছে। এর মধ্যে রয়েছে অলসতা, ওজন কমে যাওয়া, খিঁচুনি, জন্ডিস ইত্যাদি। নানান কারণে মেটাবলিক ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে। পরিবারের কোনো সদস্য যদি এই রোগ বহন করে থাকেন তাহলে পরবর্তী প্রজন্মে বিস্তার ঘটতে পারে। এছাড়া যকৃত বা অগ্ন্যাশয় সঠিকভাবে কাজ না করলেও মেটাবলিক ডিসঅর্ডার রোগ হতে পারে।

নানা ধরনের মেটাবলিক ডিসঅর্ডার হয়ে থাকে। যেমন- অ্যাসিড বেইস ইমব্যালেন্স, ডিসঅর্ডার অফ ক্যালসিয়াম মেটাবলিজম, ডিএনএ রিপেয়ার-ডেফিসিয়েন্সি ডিসঅর্ডার, গ্লুকোজ মেটাবলিজম ডিসঅর্ডার, আয়রন মেটাবলিজম ডিসঅর্ডার, লিপিড মেটাবলিজম ডিসঅর্ডার, মেটাবোলিক সিনড্রোম এক্স এবং ওয়েস্টিং সিনড্রোম। মেটাবোলিক ডিসঅর্ডার নিরাময়যোগ্য ব্যধি। প্রাথমিকভাবে শনাক্তের পর সঠিক পুষ্টি চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে সুস্থতা অর্জন করা যায়।

 

 

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top