• ** জাতীয় ** আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা ** আবারও তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি ** চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে দুই নারীর মৃত্যু ** ইউআইইউ ক্যাম্পাসে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি’ নিয়ে তোলপাড় সারাদেশ ** সিলেটে মসজিদে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু ** নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু ** সব ধরনের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন : https://www.newsflash71.com ** সব ধরনের ভিডিও দেখতে ভিজিট করুন : youtube.com/newsflash71 ** লাইক দিন নিউজফ্ল্যাশের ফেসবুক পেইজে : fb/newsflash71bd **


আজ কবিগুরুর জন্মদিন

দ্বারে এসে দিল ডাক পঁচিশে বৈশাখ

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৮ মে ২০২৩, ১৮:৩১

ছবি: সংগৃহীত

রাত্রি হল ভোর/ আজি মোর/ জন্মের স্মরণপূর্ণ বাণী,

প্রভাতের রৌদ্রে-লেখা লিপিখানি/ হাতে করে আনি

দ্বারে আসি দিল ডাক/ পঁচিশে বৈশাখ।

নিজের জন্মদিন পঁচিশে বৈশাখকে এভাবেই ডাক দিয়েছিলেন কবিগুরু। মহাকালের বিস্তীর্ণ পটভূমিতে এক ব্যতিক্রমী রবির কিরণে উজ্জ্বল এই পঁচিশে বৈশাখ। ১৮৬১ সালের এদিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। পঁচিশে বৈশাখ আজ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী। 

রবীন্দ্রনাথের রচনায় মানুষের যাবতীয় আবেগ, অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা, অভিব্যক্তির অতুলনীয় প্রকাশ ঘটেছে। বাঙালির সব সমস্যা-সংকটে তার গান, কবিতা জুগিয়েছে সাহস ও প্রেরণা। সবকিছু ছাপিয়ে আছে তার শান্তি, কল্যাণ ও বোধের প্রতি সুগভীর প্রত্যয় ও নিরন্তর কামনা। একেই তিনি নানা রূপে ছড়িয়ে দিয়েছেন তার বহুমাত্রিক সৃজনকর্মে।

বিস্ময়কর প্রতিভার বিচ্ছুরণে নিজেকে কবিগুরু  থেকে বিশ্বকবিতে পরিণত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালির চিন্তা-মনন-অনুভূতির এমন  কোনো ক্ষেত্র নেই  যেখানে  তার সৃষ্টিশীলতার  ছোঁয়া পড়েনি। আপন সৃষ্টির নির্যাসে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে ধাবিত করেছেন জাতির মননকে।

বাঙালির শিল্প-সংস্কৃতি বিনির্মাণের অগ্রপথিক এই কবি। তাই জন্মের দেড়শ’ বছর পরও শিল্প-সাহিত্যের সকল শাখাতেই দীপ্তিমান বিশ্বকবি। আজও তার সৃষ্টিসমগ্র ভাবনার বীজ বুনে দেয় সাহিত্য ও শিল্প অনুরাগীর হৃদয়ের গহিনে। আর এই সৃষ্টি দিয়েই বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে জাতীয়তার গন্ডি  পেরিয়ে আন্তর্জাতিকতার সীমানায় পৌঁছে দিয়েছেন এই কবি। আনন্দ-বেদনা কিংবা সংকটে বার বার বাঙালির সহায় হয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সেই সুবাদে বলা যায়, যখন চারপাশে শুধুই অন্ধকার তখন পথের দিশারী হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ।

অসাম্প্রদায়িক ও সর্বজনীন সমাজ ব্যবস্থার রূপকার রবীন্দ্রনাথ আজও বাঙালিকে  দেখান পথের নিশানা।  সেই বাস্তবতায় রবীন্দ্র সংস্কৃতির বহু ধারা ও সৃজনে স্নাত হওয়ার মাঝেই দীপ্যমান বাঙালির অগ্রযাত্রা ও বিকশিত হওয়ার সাধনা।

বাঙালীর প্রত্যয়ী যাত্রাপথের সকল বাঁকেই রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি বিরাজমান। বাঙালির প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণের সঙ্গে মিশে আছেন তিনি। বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা ও চেতনার এক অনন্য বাতিঘর রবীন্দ্রনাথ। বাঙালির গান, কবিতা, গল্প, নাটক, চিত্রকলা, বিজ্ঞানমনস্কতা, লোকসাহিত্য চর্চা কিংবা ভাষাবিজ্ঞান কোথায় ছিলেন না তিনি?

মহাসমুদ্রের মতো বিশাল ও বিস্তৃত পরিসরের সৃষ্টির আলোয় আলোকিত করেছেন বাঙালির মনন, চিন্তা-চেতনা ও ভাবনার ভুবনকে। আর রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে  রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। ব্রিটিশ আমলে নানাভাবে ভারতীয় মধ্যবিত্তের মাঝে জাগিয়ে তুলেছেন স্বাধীনতার স্পৃহা।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করেছেন সাংস্কৃতিকভাবে। প্রত্যাখ্যান করেছেন ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইট উপাধি। বাঙালির অখন্ডতা রক্ষায় সক্রিয় ও সোচ্চার হয়ে অংশ নিয়েছেন বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলনে। এমনকি তার অসীম সৃষ্টি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনতা।

সমাজ কল্যাণে ব্রতী হয়ে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে  তোলার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। গ্রামীণ মানুষের জীবন উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি ব্যাংক। এসবের বাইরে সামাজিক  ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আর তার দর্শন চেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে মানব কল্যাণের বাণী।

বঙ্গীয় শিল্প-সাহিত্যের আধুনিকীকরণে রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় রূপকল্পের দুর্বোধ্যতা ও কঠোরতাকে বর্জন করেন। নানা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়কে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে তার উপন্যাস, ছোটগল্প, সঙ্গীত, নৃত্যনাট্য ও প্রবন্ধ। কবিতায় এনেছেন নতুন মাত্রা, দিয়েছেন প্রাণের ছোঁয়া। এ কারণেই কালের পরিক্রমায় উত্তীর্ণ বিশ্বনন্দিত সাহিত্যিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

সাহিত্যে তার নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তি বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য বয়ে এনেছিল বিশ্বের গৌরব। যে গীতাঞ্জলির জন্য তার এই নোবেল পুরস্কার অর্জন, সেই গীতাঞ্জলি এবং আরও অনেক বিখ্যাত রচনা বর্তমান বাংলাদেশের মাটিতেই। তার লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’ এদেশের জাতীয় সংগীত।

তার বহুল পরিচিত গ্রন্থগুলো হলো গীতাঞ্জলি, গোরা, ঘরে বাইরে, রক্তকরবী, মানসী, বলাকা, সোনার তরী, পূরবী,  শেষের কবিতা ইত্যাদি। কবিগুরুর কাব্য, ছোটগল্প ও উপন্যাস গীতিধর্মিতা, সহজবোধ্যতা, ধ্যানগম্ভীর প্রকৃতিবাদ ও দার্শনিক চিন্তাধারার জন্য প্রসিদ্ধ।

বিশ্ববাসীর জন্য কবিগুরু উপহার দিয়েছেন হৃদয়ে অনুরণন সৃষ্টিকারী কয়েক হাজার শ্রুতিমধুর গান। এভাবেই সাহিত্য ও শিল্পের মাধ্যমে বাঙালীর হৃদয়ের শিকড়ে বেঁচে আছেন রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বকবির জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তার কবিতার চরণ ধরেই বলতে হয়-তুমি যে তুমিই, ওগো/সেই তব ঋণ/আমি মোর প্রেম দিয়ে/শুধি চিরদিন ...।

 
 
 
 



পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top