ভিড়ের শহরে মানবিকতার আলো: মেট্রোরেলে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে ফিরে পেলেন বাবা
সুজন হাসান | প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০২৫, ১৫:০৩

গতকাল ছুটির দিনের ভিড়ে রাজধানীর মেট্রোরেল ছিল চিরচেনা চেয়ে কিছুটা বেশি ব্যস্ত। গন্তব্যে ছুটে চলা নানা বয়সী যাত্রীর মুখে ক্লান্তি, উদ্বেগ আর অপেক্ষার রেখা স্পষ্ট। ঠিক এমন এক দিনে টিএসসি স্টেশনে ঘটে গেল একটি হৃদয়ছোঁয়া ঘটনা, যা মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও শেষে উদ্ভাসিত হলো মানবিকতা ও সহমর্মিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
টিএসসি স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধ বাবা ও তার ছোট্ট মেয়ে। গন্তব্য ছিল কাজীপাড়া। ট্রেন আসার পর ভিড়ের চাপে মেয়েটি উঠে পড়লেও দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাবা আর উঠতে পারেননি। মুহূর্তেই ট্রেনটি ছুটে যায়—আর মেয়েটি একা হয়ে পড়ে ট্রেনের ভেতরে। ছোট্ট মেয়েটির চোখে আতঙ্ক, মুখে কান্না। প্ল্যাটফর্মে তখন হতভম্ব তার বাবা। কী করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
এমন সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ শাকিল এগিয়ে আসেন। তিনি সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী। তিনিও সেদিন ওই ট্রেনে উঠতে পারেননি। ঘটনাটি চোখে পড়তেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। শাকিল বলেন, “দেখলাম মেয়েটা একা, বাবা প্ল্যাটফর্মে। মাথায় এল—আমার পরিচিত নাহিদ ভাই তো ওই ট্রেনেই উঠেছেন। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ফোন করি।”
নাহিদ দ্রুত খোঁজাখুঁজি শুরু করেন ট্রেনের মধ্যে। কিছু সময় পর মেয়েটিকে খুঁজে বের করেন এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে তাকে তার বাবার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। মেয়েটির কান্না একটু একটু করে থামে, বাবার কণ্ঠে আশ্বাস খুঁজে পায় সে।
এরপর শাকিল পরবর্তী মেট্রো ধরে মেয়েটির বাবাকে নিয়ে রওনা দেন কাজীপাড়া স্টেশনের দিকে। গন্তব্যে পৌঁছেই ঘটে সেই মুহূর্ত—যেখানে আবেগের জোয়ারে ভেসে যায় পুরো প্ল্যাটফর্ম।
স্টেশনে বাবাকে দেখেই ছোট্ট মেয়েটি দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। কান্না আর হাসির মিশ্র অনুভূতিতে কাঁপছিল তার ছোট্ট শরীর। বাবাও গলা কাঁপিয়ে বললেন, “আমার এক ছেলে ঢাকা মেডিকেলে পড়ে। আজ যদি মেয়েটাকেও হারিয়ে ফেলতাম... আল্লাহ মাফ করছেন। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।”
ঘটনার নায়ক তরুণ শাকিল বলেন, “মেয়েটার মুখে হাসি দেখে মনে হলো—সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারাটা সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পাশে ছিলেন সুমন ভাই, সাথী আপু ও শাহেদ ভাই—সবাই মিলে সাহস ও সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছি মাত্র।”
একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যে কত বড় অঘটন বয়ে আনতে পারতো, তা ঠেকানো গেছে কয়েকজন সচেতন ও মানবিক তরুণের দ্রুত পদক্ষেপে। ঢাকার এক ব্যস্ত স্টেশনে সেই মুহূর্তে যেন দেখা গেল—মানবিকতাই এখনও এই শহরের সবচেয়ে বড় শক্তি।
এই ধরনের উদাহরণ প্রমাণ করে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একটি সহানুভূতিশীল মন ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মানসিকতা কতো বড় প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা চাই, শহরের প্রতিটি কোণায় এমন মানবিক চিত্র ফুটে উঠুক প্রতিদিন।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।